হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শ্রাবণ মাস অত্যন্ত পবিত্র। প্রচুর মানুষ শ্রাবণ মাস জুড়ে শুধুই নিরামিষ খান। এই মাসে হিন্দুরা শিবের পুজো করেন। পুজো-পাঠ থাকলে মন শান্ত রাখা আবশ্যক। ফলে খাবার আর পানীয় দুই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই এই মাসে বিশেষ কিছু খাবার থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। এছাড়াও বর্ষাতে খাবারের ব্যাপারে সকলকেই সতর্ক থাকতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। বর্ষার নোংরা জল থেকে খাবাক দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। সঙ্গে আর্দ্র আবহাওয়াতে ব্যাকটেরিয়া-জীবাণুরা বংশবিস্তারও বেশি করে। তাই আয়ুর্বেদ দিচ্ছে বিশেষ পরামর্শ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাত, পিত্ত আর কফের উপর নির্ভর করে যাবতীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। শরীরের এই অভ্যাসগুলি মাথায় রেখেই খাবার নির্ধারণ করা হয়। তাই শ্রাবণ আর ভাদ্র মাসে যে কোনও শাক আর দই থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। যদিও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও আসে পরিবর্তন। তবে কেন শ্রাবণ আর ভাদ্রে এই দুই খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়?
আয়ুর্বেদের সনাতন পদ্ধতিতে ঋতুচর্য’-এ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। এই নিয়মে শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে শরীরে বাত এবং পিত্ত প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। যে কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই দুই মাসে যে সব খাবার থেকে অতিরিক্ত বাত আর পিত্তর সম্ভাবনা থাকে, সেই সব খাবার এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
আয়ুর্বেদ বলে শ্রাবণ মাসে বাত বাড়ে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতেই সেই সব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যা বাতকে বাড়িয়ে দেয়। যে কোবও শাকই এই দোষ বৃদ্ধি করে। তাই শ্রাবণ মাসে শাক খেতে মানা করা হয়। তেমনই ভাদ্র মাসে দই খেতে মানা করা হয়। এই সময় শরীরের পিত্ত বৃদ্ধি পায়। যা শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। যে কারণে এই সময় দই এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলছে?
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, বর্ষাতে বাড়ে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব। যে কারণে শাক-পাতাতেও তাদের উপস্থিতি থাকে বেশি। খুব ভাল করে ধুলেও তাতে নোংরা থেকে যায়। এমন কিছু পোকা থাকে যা সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। এছাড়াও বর্ষায় জল দূষণ থেকে শাক পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচাইতে বেশি। ভাদ্র মাসে দই এর পাশাপাশি যে কোনও ফার্মান্টেড ফুড অর্থাৎ ধোসা, ইডলি, ধোকলা, অ্যালকোহল এব খাবারও এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কারণ এই সব খাবারই গাঁজানো প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হয়ে থাকে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়। সংক্রমণ এড়াতেই এইসব খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যদি নিতান্তই খেতে হয় তাহলে কি করবেন?
যদি বর্ষায় শাক আর দই খেতেই হয় তাহলে বেশ কিছু সাবধাণতা মেনে চলতে হবে। খেলে অবশ্যই টকদই খাবেন। সেই দই এর সঙ্গে ভাজা জিরে গুঁড়ো, গোলমরিচ এবং সামান্য রকসল্ট মিশিয়ে তবেই খান। শাক খাওয়ার আগে ইষদুষ্ণ জলে এক চিমটে নুন ফেলে তা ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর আবার ধুয়ে নিয়ে তবেই রান্না করুন। কোনও ভাবেই কাঁচা স্যালাড খাবেন না এই সময়। কারণ এতে হজম প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব পড়ে। অন্ত্রকে সুস্থ রাখতেই এই সব পরামর্শ দেওয়া হয়।