মেয়ে মানেই রান্নাঘরে বেশি সময় কাটাবে, রান্নাঘর নিয়েই হবে তার জগৎ, সব রকম রান্না জানতে হবে, সবার পছন্দের রান্না জানতে হবে- হেঁশেল নিয়ে মায়েদের থুড়ি মেয়েদের জন্য থাকে লম্বা ফিরিস্তি। কারণ রান্নাঘরে নাকি ‘লক্ষ্মীর আধার’! আর তাই সেখানে অক্ষরে অক্ষরে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারলে তবেই লক্ষ্মী প্রসন্না হন এবং বসবাস করেন। যে মেয়ে রান্না করতে ভালবাসেন না, ভাল করে চিংড়ির মালাইকারি বানাতে জানাতে না, বরের পছন্দের খাবার বানাতে জানে না- ‘তাহলে তাকে দিয়ে আর লাভ টা কি হল’! রোজ মা সুন্দর সুন্দর টিফিন গুছিয়ে দেবে, জন্মদিনে পাঁচ পদ রেঁধে-বেড়ে খাওয়াবে, স্বামী-সন্তান বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত নিজের খিদে চেপে বসে থাকবে- ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই হল রীতি। দিনের পর দিন তা চলে আসছে। খিদে পেলেও মা খেতে পারবেন না, কেন না বাড়ির বাচ্চাদের খাওয়া হয়নি। যাবতীয় প্রিয় খাবার বাড়িতে মা-দিদিমারাই বানান, কখনও বাবারা নন। ব্যতিক্রম খুব কম বাড়িতেই রয়েছে। যে কারণে মেয়েদের উপর এই রান্নাঘরের প্রত্যাশার চাপটা একটু বেশিই থাকে।
বিয়ের সময়ে তাই খুব সাধারণ প্রশ্ন থাকে -‘মেয়ে রান্নাবান্না জানে কিনা’। বোধহয় এই ভয়েই মেয়েদের ছোটবেলা থেকে খেলনার প্রতীক হিসেবে সমাজ হাতে ধরিয়ে দেয় ‘রান্না-বাটি’। যদিও এই ধারণা ভেঙে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এসেছেন তবুও কোথাও গিয়ে একটা ট্যাবু থেকেই গিয়েছে। এখনও প্রায় সব শ্বশুরবাড়িতেই বউমার হাতে বানানো চায়ের প্রতীক্ষায় থাকেন শ্বশুর -শাশুড়িরা।
ডায়েট এবং খাবার-দাবার নিয়ে বরাবরই মিথ ভেঙেছেন পুষ্টিবিদ রুজুতা দিওয়েকর। স্থানীয় এবং দেশী খাবারের প্রতিই তিনি সওয়াল করেন। সেই সঙ্গে শরীর ও স্বাস্থ্যের উপযোগী টিপসও দেন। সম্প্রতি রুজুতা তাঁর ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। যেখানে তিনি কর্মরতা মেয়েদের রান্নাঘরে কম সময় দেওয়ার কথা বলেন। পোস্টে রুজুতা লেখেন- ‘কর্মরতা মেয়েদের যা দরকার তা হল ভালবাসা ভরা কিছুটা ক্যালোরি। রান্নাঘরে অহেতুক সময় নষ্ট করবেন না’। এর সঙ্গে রুজুতা তাঁর নিজের প্লেটেরও একটি ছবি দিয়েছেন। যেখানে তিনি বাড়িতে বানানো মিক্সড ভেজ পোলাও আর পনিরের ছবি দিয়েছেন। সেই প্লেটে গুণে গুণে তিন টুকরো পনির আর ২ চামচ পোলাও নিয়েছেন। ছবিতে খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, পনির সামান্য তেল, গোটা জিরে, টমেটো, পেঁয়াজে সঁতে করে বানানো। যে পোলাও তিনি বানিয়েছেন তাতে বিট, গাজর, কড়াইশুটি, ক্যাপসিকাম, বিনস আর ছোট পনিরের টুকরো রয়েছে।
প্লেট ভরে খাবার সাজিয়ে খেলেই তা দেখতে ভাল লাগে না। সঙ্গে অবশ্যই প্রয়োজন ভালবাসার। রুজুতার শেয়ার করা এই প্লেট ভালবাসার ক্যালোরিতে ভরপুর। আছে পুষ্টিও। এই ভাবে নিজের পছন্দমতো রেঁধে খান মাঝেমধ্যে। ভাল থাকবে মন।