AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩৬–সাঁতরাগাছিকে পিছনে ফেলে রেখে কিছুটা এগিয়ে বাঁ দিক নিলেই…

Khirai: এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে আসুন পরবর্তী গন্তব্য, যা মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে 'খিরাই ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস'। এখানে কংসাবতী নদীর দুই পাশে বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করা হয়, যার রূপ দেখার মতো। এখানে আপনি বাইক নিয়ে নদী তীরবর্তী রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন খিরাই ফ্লাওয়ার গার্ডেন, পোড়ার মাঠ, রোস গার্ডেন, খিরাই সিটি অফ ফ্লাওয়ার ইত্যাদি স্থানে।

মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩৬–সাঁতরাগাছিকে পিছনে ফেলে রেখে কিছুটা এগিয়ে বাঁ দিক নিলেই...
| Updated on: Jan 28, 2024 | 9:53 AM
Share

বেশ ঠান্ডা পড়েছে। তাই চলুন একদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ি, কলকাতারই পাশে একদিনের রাইডে। মাত্র কিছু কিলোমিটার দূরেই আপনি পাবেন নদী, নদীবাঁধ এবং বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুলের চাষ। এছাড়াও যেখানে রয়েছে অনেক পরিযায়ী পাখি, শীতের রৌদ্রছায়ায় প্রকৃতির এক মহীয়সী রূপ দেখতে রবিবারের এই ছুটিতে বেরিয়ে পড়ুন। এসব জায়গায় দিগন্ত মিশেছে প্রকৃতির ক্যানভাসে। নদীকেন্দ্রিক এক জীব বৈচিত্র্য। সভ্যতার আদিম যুগ থেকে মানুষ তথা জীব পছন্দ করে নদীর পাশেই বসতি স্থাপন করতে। তাই এই প্রকৃতির অদ্ভুত রূপ খুঁজে পাওয়া যায় নদীর তীরেই। আর এরই সঙ্গে রয়েছে কিছু ঐতিহাসিক স্থান, নদীবাঁধ, দিগন্ত বিস্তৃত ফুলের বাগিচা যেখানে আপনি গেলে মনে হবে যেন অন্য জগতে আছি। তাই চলুন… আজ বেরিয়ে পড়ি বাগনান, কোলাঘাট, ঘাটাল, খিরাইয়ের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আর এখানে রয়েছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা, সারি দিয়ে নৌকা, ছোট-ছোট নৌকায় চড়ে স্থানীয় মানুষের মাছধরা, বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসের মাঝে-মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বড়-বড় গাছের সমাহার। জোয়ারের সময় দেখা যায় এই নদের যৌবনের খেলা, আর এই দেউলটি কথা-সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান হওয়ায় তাঁর লেখার মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই জায়গার বর্ণনা।

রবিবার সকাল-সকাল ব্রেকফাস্ট শেষ করে বেরিয়ে পড়ুন বকশির উদ্দেশ্যে, যেটি বাগনান থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি দু’টি নদীর সংযোগস্থল। এছাড়াও একদিনের পিকনিক এবং বাইক রাইডিং-এর জন্য আদর্শ জায়গা। এটি মন্দেশ্বরী নদী এবং রূপনারায়ণ নদীর সংযোগস্থল; ভূপ্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই জায়গাটি বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে রয়েছে বকশি পার্ক, মানকুর পার্ক। এখানে আপনি নৌকা করে জলের সমাহিত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। তার জন্য ফেরির ব্যবস্থা আছে। এখানে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ার আগে একটি ব্যাগে বাইকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, একটি জলের বোতল আর শুকনো খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। সাঁতরাগাছিকে পিছনে ফেলে রেখে কিছুটা এগিয়ে বাঁ দিক নিন, যে রাস্তা মুম্বই-কলকাতা হাইওয়ে নামে পরিচিত। সেই রাস্তা ধরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বাগনান পৌঁছে যান। বাগনানের ক্রসিং থেকে ডান দিক নিয়ে সোজা চলে আসুন বকশি ফেরিঘাটে। এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে আসুন ঐতিহাসিক একটি স্থান, যেটি মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত—শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। এছাড়াও বাণীত্রাস নামক গ্রামটিতে আছে নদীর সৌন্দর্য, আর পরিযায়ী পাখির সমাহার। কথা-সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িটির চারপাশ সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং তাতে নানা ধরনের গাছ লাগানো সবুজ একটা অংশ রয়েছে। এখানে দুলালচন্দ্র মান্না এবং প্রীতম নামে দুই যুবক আপনার গাইড—ভাল করে ঘুরে দেখাবে আশপাশ। দেখতে পাবেন লেখকের থাকার জায়গা, বসার ঘর, রাতের শোওয়ার ঘর এবং খোলা বারান্দা। আর দেখতে পাবেন বাড়ির এক পাশে পাঁচিলের মধ্যে লেখকের স্ত্রীর মেজ ভাই এবং স্বয়ং লেখকের সমাধি।

এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে আসুন পরবর্তী গন্তব্য, যা মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে ‘খিরাই ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস’। এখানে কংসাবতী নদীর দুই পাশে বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করা হয়, যার রূপ দেখার মতো। এখানে আপনি বাইক নিয়ে নদী তীরবর্তী রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন খিরাই ফ্লাওয়ার গার্ডেন, পোড়ার মাঠ, রোস গার্ডেন, খিরাই সিটি অফ ফ্লাওয়ার ইত্যাদি স্থানে। এখানে এলে আপনার ভূস্বর্গের চেয়ে কিছু কম মনে হবে না, দিগন্ত বিস্তৃত ফুলের বাগিচা, নদী, জঙ্গল… এছাড়া নানা পাখির সমাবেশ তো আছেই। মনে হবে এ এক অচেনা পৃথিবী, যেখানে আছে রংবেরঙের ফুলের সমাহার, নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘ আর নদীপ্রবাহের খামখেয়ালিপনা। আবার এই নদীর তীরে আপনি চাইলে নৌকাও চড়তে পারেন। এই অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্যে আপনাকে ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করতে একপ্রকার বাধ্য করবে বলা যেতে পারে।

এখানে অনেকটা সময় কখন যে কেটে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না।এরপর এনএইচ সিক্সের পাশে একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হুগলি জেলার গড় মান্দারণ দুর্গ নামক স্থানে। দুর্গটির ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ছবি তোলার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। এছাড়াও রয়েছে এখানে সুন্দর একটি পার্ক, জলাশয়ের উপর দিয়ে হাঁটার জন্য রয়েছে একটি ওভার ব্রিজ। র উপরে আপনি অনেকটা সময় কাটাতে পারবেন; আর এখান থেকেই নানা ধরনের পাখির ছবিও তুলতে পারবেন। এখানে আপনি পড়ন্ত বিকেলে পাখির কোলাহলে হারিয়ে যাবেন। শহুরে মানুষের কাছে বিস্তীর্ণ সবুজের দেশে হারানোর এটি একটি আদর্শ জায়গা। এছাড়াও এখানে আছে ওয়াচ টাওয়ার, যার উপরে উঠে আপনি বন্য পশুপাখি দেখার সুযোগ পাবেন।

এখানে আপনার মন না ভরলে চলে আসুন তার ঠিক পাশেই গড় মান্দারণ পার্ক এবং সাতবেড়িয়া পার্ক। মাটির কটেজ এবং মাটির তৈরি দোতলা বাড়ি। এছাড়া ফুল, পাখির সমাহার তো আছেই। এরপর বাড়ি ফেরার পালা। এখান থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। তাই সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ এখান থেকে বেরিয়ে এনএইচ৬ হয়ে ডানদিক নিয়ে সাঁতরাগাছি হয়ে কলকাতায় ফিরে আসুন, যা বাইকে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে।