আমাদের চারপাশে শুধুই নেগেটিভ খবরে ছড়াছড়ি। করোনার জেরে সারা বিশ্বের বহু দেশেই লকডাউন জারি করা হয়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর দিশেহারা অবস্থা দেশের। স্বজনহারাদের আর্তনাদ আকাশের ঘূর্ণিপাকে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এতকিছুর মধ্যেও ভারতীয় হিসেবে প্রথম মহিলা ডিজাইনার হিসেবে প্যারিস হাউট কাউচার উইক ২০২১-য়ে পোশাক প্রদর্শনের জন্য ডাক পেলেন বৈশালী শধঙ্গুলে। যিনি বৈসালী এস লেবেলের মালিক। প্যারিস এই জনপ্রিয় ফ্যাশন ইভেন্টে তাঁকে অতিথি ডিজাইনার হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁতশিল্পগুলির সঙ্গে ফিউশন করে একটি নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছেন বৈশালী। তাঁতের সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে আধুনিক শিল্পের ছোঁয়া দিয়েছেন এই শিল্পী। তাঁর লক্ষ্যই হল, দেশের অন্যতম শিল্প তাঁতকে বিশ্বের দরবারে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তুলে ধরবেন। কয়েক সপ্তাহ পরেই প্যারিসে প্রদর্শন রয়েছে। তবে এটাই তাঁর প্রথম কৃতিত্ব নয়, ২০১৫ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে তাঁর ডিজাইন করা পোশাক প্রদর্শিত হয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই সম্মান পেতে দীর্ঘ জীবন তাঁকে স্ট্রাগল করতে হয়েছে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মধ্যপ্রদেশের বিদিশা বাড়ি ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন নিজের প্যাশনের টানে। ফ্যাশন ও নিত্য নতুন ডিজাইনের নেশায় সে বুঁদ। মুম্বইয়ে এসে তাঁকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। প্রচুর বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ২০০১ সালে তৈরি করেন লেবেল বৈশালী এস। যেখানে স্থানীয় কয়েকশ কারিগর সেখানে কাজ করেন। তাঁদের আর্থিক সাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।
তবে ফ্যাশন দুনিয়ায় আসাটা তাঁর পরিবারের প্রথম নয়, বৈশালীর বাবা সরকারি চাকুরিতে যোগ দেওয়ার আগে একজন শিল্পী ছিলেন। শিল্পকলা ও ডিজাইনের প্রতি অনুরাগ তাঁর অনুপ্রেরণার পিছনে ছিলেন তাঁর বাবা। মুম্বইয়ে কখনও জিম ট্রেনার হিসেবে, রফতানি অফিসে কাজ করে নিজের পড়াশোনা চালাতেন। সমস্যা ছিল ইংরেজিতেও। বহু পরিশ্রম ও কষ্টের পর মালাদে প্রথম বুটিক খোলেন। তার পর ধীরে ধীরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির এক অন্যতম সদস্য হয়ে যান। ২০১৩ সালে ফ্যাশন ডিজাইনে মাস্টার্স করে তিনি মিলানে চলে যান। সেখানে চলে নিজেকে প্রমাণ করার অবিরাম চেষ্টা। তার সুফল পাচ্ছেন আজ।