স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কর্মরত। দু’জনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন। উইকএন্ডে ডিনারে যাওয়া, বছরে দু’বার ঘুরতে যাওয়া, অনুষ্ঠান বাড়িতে একসঙ্গে উপস্থিত হওয়া—সুখী দম্পতির সমস্ত দায়িত্ব তাঁরা পালন করেন। কিন্তু তাঁরা ‘সুখী’ নন। দিনের শেষে তাঁরা একা। আর এই একাকিত্বের পিছনে দায়ী মোবাইল ফোন। সারাদিনের কাজকর্ম সেরে সঙ্গীকে সময় দেওয়ার বদলে ফোনে রিলস দেখেই সময় কাটান একাংশ দম্পতি। এটা ‘ঘর ঘর কি কাহিনি’। অন্তত এমনটাই দাবি জানাচ্ছে মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা ভিভো (Vivo)। পাশাপাশি ম্যারেজ কাউন্সিলার ও মনোবিদদের মতে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রয়েছে মোবাইল।
সম্প্রতি, মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা ভিভোর তরফে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে ৮৮% মানুষ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে তাঁদের সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে। ৬৭% মানুষ সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে জানিয়েছেন। দৈনন্দিন কাজের জন্য স্মার্টফোনের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসারও বেড়েছে। এর ফলেই ফোনের সঙ্গে সময়ও বেশি কাটছে আর এটাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে। মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি বসে কথা বলার বদলে বেশিরভাগ জনের সময় কাটছে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক, কমেন্ট, শেয়ারে।
ভিভোর সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৪.৭ ঘণ্টা মানুষ স্মার্টফোনে সময় ব্যয় করেন। পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই একটু বেশি সময় কাটান তাঁদের ফোন নিয়ে। ৯০% অর্থাৎ একটা বড় অংশের মানুষ স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন। আর ঠিক যে সময় ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রোল করছেন, আর সঙ্গী যদি কিছু জিজ্ঞাসা করেন, ৭০% মানুষ তখন বিরক্তি প্রকাশ করে। এই বিষয়টি দেখতে ক্ষুদ্র মনে হলেও, এগুলো সম্পর্কে চির ধরাতে বেশি সময় নেয় না। তাই তো ৬৮% যুগল নিজেদেরকে অপরাধী বলেও মনে করেন। তাঁরা আফসোস করেন যে, ফোনে সময় কাটানোর বদলে একে-অপরের সঙ্গে আরও সময় কাটালে ভাল হত। সম্পর্কটা হয়তো টিকে যেত। স্মার্টফোনের বর্ধিত ব্যবহারের মাঝে ৮৪% দম্পতি একসঙ্গে সময় কাটাতে চান।
সারাক্ষণ মোবাইল ঘাঁটার জন্যই যে সম্পর্কে চির ধরছে, শুধু তা নয়। দম্পতিদের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গাও গড়ে উঠছে না। বাড়ছে পরকীয়াও। গার্হস্থ্য হিংসার পিছনে নানা কারণ দায়ী থাকে। যার মধ্যে একটা মোবাইলও। দিনের শেষে বিছানায় গেলে সঙ্গে মোবাইল নিয়ে যান অনেক দম্পতি। এমনও ঘটনা রয়েছে যেখানে, স্বামীর হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট থেকে কল লগ সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন স্ত্রী। একটু এদিক-ওদিক মনে হলেই শুরু হয়ে যায় অশান্তি। এখান থেকেই বোঝা যায় সম্পর্কে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি তো হয়নিই, পাশাপাশি এগুলো সম্পর্কে তিক্ততা বাড়িয়ে তুলছে।
বর্তমানে পরকীয়ার ঘটনা বেড়েছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের পিছনে একাধিক কারণ থাকে। সঙ্গীকে সময় না দেওয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করাও কিন্তু একটা কারণ। তবে, এমনও ঘটনা রয়েছে, যেখানে দম্পতিরা একে-অপরকে স্টক (stalk) করেন। স্বামী কোথায় রয়েছে, কার সঙ্গে সারাদিন কথা বলেছে, এগুলো জানার জন্য স্বামীর ফোনে বিশেষ সফটওয়্যার ইনস্টল করে রেখেছেন স্ত্রী। এই ধরনের ঘটনা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, এই ধরনের দম্পতিদের মধ্যে বিশ্বাস বলে কোনও বস্তু নেই। আর এই একটা কারণই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।