নবরাত্রি ও দুর্গাপুজো মিটতে না মিটতেই ফের উত্সবের (Festive in India) মেজাজে ফিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে গোটা ভারত। কারণ সামনেই দীপাবলি (Diwali 2022)। আলোর রোশনাইয়ে মাততে ফের তোরজোড় শুরু ভারতে প্রতিটি কোণা। অন্ধকারের উপর থেকে আলো ও শুভ শক্তির জয়কে প্রতীকী হিসেবে দিওয়ালি পালিত হয়। মনে করা হয়, এই দিনে রাম তার স্ত্রী সীতা এবং তার ভাই লক্ষ্মণকে লঙ্কায় রাক্ষস রাবণকে পরাজিত করে চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন। ঐতিহ্যগত এই আলোর উত্সবের (Festival of Light) সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক ঐতিহ্য়। ওই দিন শুধু ই আলোর উত্সব নয়, পালিত হয় শক্তিরও আরাধনা।
কালীপুজো, পশ্চিমবঙ্গ: সারা দেশে দীপাবলি বা দিওয়ালি উত্সব পালিত হলেও পশ্চিমবঙ্গে সেদিন কালীর আরাধনা করা হয়। কালী পুজো বা শ্যামা পুজোর সঙ্গে মিশে আসে বাঙালির শাক্ত মানসিকতা। গভীর রাত পর্য়ন্ত শ্যামাপুজো করা হয়। দেবী কালীকে মাছ, মাংস, মিষ্টি, মুসুর ডাল , চাল ও জবা ফুল দিয়ে নিবেদন করা হয়। এছাড়াও কালীপুজোর একদিন আগে বাঙালিক বাড়িতে চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বালিয়ে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে ভূত চতুর্দশী আচার পালন করা হয়।
কাউনরিয়া কাঠি, ওড়িশা: ভারতের সবচেয়ে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। ওড়িশায় দীপাবলি ভিন্নভাবে পালিত হয়। কাউনরিয়া কাঠির সময় এই রাজ্যের বাসিন্দারা তাদের পূর্বপুরুষদের আমন্ত্রণ জানাতে পাটের কাঠি পোড়ান, আর তাতে দীপাবলির দিন তারা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন। পাটের কাঠ পোড়ানোর সঙ্গে প্রার্থনা করেন, “বাদাবাদুয়া হো আন্ধারে আসা, আলুয়া রে যাও (পূর্বপুরুষরা, অন্ধকারে এসে আলোকিত পথ ধরে ফিরে যাও)।”
বান্দি ছোড় দিবস,পঞ্জাব: বান্দি ছোড় দিবস হল একটি শিখ ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। গুরু হরগোবিন্দ গোয়ালিয়র দুর্গ থেকে ৫২জন রাজাকে উদ্ধার করে। সেই দিনের কথা স্মরণ করতেই এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয়। ইতিহাস অনুযায়ী, সেই সময় মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর তাদের আটক করেছিলেন। শরত্কালে ও দীপাবলির সময় এই ঘটনাটি ঘটে বলে জানা যায়। এদিন প্রত্যেকটি বাড়িকে আলোর সাজে সাজানো হয়। চলে শোভাযাত্রা, গুরুদ্বারে ল্যাঙ্গারের ব্যবস্থা।
দেব দীপাবলি, বারাণসী: দেবতাদের দীপাবলি। দিওয়ালির দিন বারাণসীতে দেব দীপাবলি ধুমধাম করে পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই সময় স্বর্গের দেব-দেবী পবিত্র গঙ্গায় ডুব দেন। বারাণসীর প্রতিটি মন্দিরে মাটির প্রদীপ, ফুল ও রঙ্গোলি দিয়ে সাজানো হয়। কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় ও দীপাবলির পনেরো দিন পরে উদযাপিত হয়।
কৃষ্ণপুজো, গোয়া: দীপাবলির সময় গোয়ানরা ভগবান কৃষ্ণকে পুজো করেন। নরকাসুরকে পরাজিত করেছিলেন কৃষ্ণ। উত্সব চলাকালীন রাস্তায় এই নররাক্ষসের কুশপুতুল পুড়িয়ে অশুভ শক্তির বিনাস ঘটিয়ে শুভ সূচনাকে উদযাপিত করা হয়। অন্ধকারের মধ্যে আলোর উত্সবের জন্য আতসবাজি, প্রদীপ জ্বালিয়ে এই পৌরানক কাহিনিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া এদিন মিষ্টি ও খাবার বিতরণ করা হয়। স্থানীয়রা ঘর আলো করে সাজিয়ে ও মেঝেতে রঙ্গিন রঙ্গোলি আঁকেন।