গরমের দিনে মন চায় পাহাড়ে ছুটি কাটাতে। কিন্তু বর্ষায় সেই সুযোগ তুলনামূলকভাবে একটু কম। তার উপর পকেটে টান সব মিলিয়ে ভূস্বর্গ বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। কিন্তু রয়েছে বিকল্প। কাশ্মীরের স্বাদ হয়তো আপনি বাজেটের মধ্যে আস্বাদন করতে পারবেন না, কিন্তু তিন দিনের ছুটিতে ঘুরে নিতে পারবেন দারিংবাড়ি। খুব একটা দূরেও কিন্তু নয়। প্রতিবেশি রাজ্য ওড়িশার কোলেই লুকিয়ে রয়েছে এই ‘কাশ্মীর’। যাঁরা নিরিবিলিতে কয়েকটি দিন পাহাড়ের কোলে কাটাতে চান তাঁদের কাছে আদর্শ গন্তব্য হতে পারে ওড়িশার দারিংবাড়ি।
ওড়িশার শৈলশহর দারিংবাড়ি আসলে ‘ওড়িশার কাশ্মীর’ নামেই জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। সৌন্দর্যই যদিও একমাত্র কারণ নয় এখানে। আসল কারণ হল, শীতকালে এখানে বরফ পড়তেও দেখা গিয়েছে। এমনকী এপ্রিল-মে এখানে গায়ে একটা কম্বল না জড়িয়ে রাতে থাকতে পারবেন না। অবিশ্বাস্য শোনালেও এটা সত্যি, আর তাই সস্তায় পুষ্টিকর ডেস্টিনেশন দারিংবাড়ি।
ওড়িশা বললেই প্রথমে মাথায় আসে পুরী, চিলকা, জগন্নাথ দেবের মন্দিরের কথা। খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া হয় ওড়িশার পূর্বঘাট পর্বতের সৌন্দর্য। ওড়িশার কোলে দারিংবাড়ির মতো এমন একটি পাহাড়ি জনপদ লুকিয়ে রয়েছে তা না গেলে বিশ্বাস করা সত্যিই একটু কঠিন। তাছাড়া না গেলে পূর্বঘাট পর্বতের নৈসর্গিক দৃশ্যও মিস করে যেতে পারেন আপনি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত দারিংবাড়ি বর্ষার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। কার্যত এটি হল পূর্বঘাট পর্বতমালার কোলে লুকিয়ে থাকা এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। ওড়িশার কন্ধমাল জেলায় অবস্থিত দারিংবাড়ি সত্যিই যেন প্রকৃতির বর প্রাপ্ত। হাতে যদি দিন তিনেকের ছুটি থাকে তাতেই ঘুরে নিতে পারেন দারিংবাড়ি।
পকেটে টান থাকলেও খুব কম খরচে ঘুরে নিতে পারেন পাইন আর কফি গাছে ঘেরা এই দারিংবাড়ি। মেঘ ও কুয়াশায় ঘেরা দারিংবাড়িতে রয়েছে মশলার বাগানও। লুদু জলপ্রপাত, দারিংবাড়ি জলপ্রপাত, মড়ুবান্দা জলপ্রপাত, এবং পুতুদি জলপ্রপাতের মতো জায়গাগুলোও এখানে বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ জলপ্রপাতগুলোই ঘন অরণ্য দ্বারা আবৃত। সুতরাং অ্যাডভেঞ্চারের যে কমতি কোনও হবে না তা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছে।
ঝিলাম নদী না থাকলেও ওড়িশার এই কাশ্মীরে রয়েছে দুলুরি নদী। ঘন পাইন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সশব্দে অবিরাম বয়ে চলেছে দুলুরি। বর্ষায় এর রূপ আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে। এরই পাশে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলে শুনতে পাবেন নাম না জানা বহু পাখির ডাক। আশেপাশের দর্শনীয় স্থান বলতে রয়েছে লাভার্স পয়েন্ট, সাইলেন্ট ভ্যালি, হিল ভিউ পার্ক ইত্যাদি। গাড়ি ভাড়া করে সহজেই ঘুরে নিতে পারবেন এই জায়গাগুলি।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন-
ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক বিমানবন্দর থেকে ২৯০ কিলোমিটারের পথ দারিংবাড়ির। আর যদি ট্রেনে করে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে আপনাকে নামতে হবে ব্রহ্মপুর রেল স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন দারিংবাড়ি। যদিও সেই পথের দূরত্বও প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। তবু বর্ষায় পূর্বঘাটের এই রাস্তা মন্দ লাগবে না আপনার।
এখানে থাকার জন্য অনেকগুলো হোটেল, বাংলো ও রিসোর্ট রয়েছে। সেখানেই আপনি খাওয়া-দাওয়াও সেরে ফেলতে পারেন। এখানে ১,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা অবধি বাংলো ও রিসোর্ট রয়েছে। পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে বেছে নিলেই হবে। পূর্বঘাটের কোলে ক্যাম্পিং করতে চাইলে সেই সুযোগও রয়েছে দারিংবাড়িতে।