এক সময় সেখানে কেউ যেত না। পর্যটকের নামমাত্র ছিল না সেই জায়গায়। আর এখন শুধু ছুটি পাওয়ার অপেক্ষা। দলে দলে মানুষ ভিড় করছেন সেই জায়গা। এই চিত্রটা উত্তর থেকে দক্ষিণ সমস্ত অফবিট স্পটের। মানুষের মধ্যে ভ্রমণের নেশা বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়ে অফবিট ডেস্টিনেশনের চাহিদা। সাধারণত বেশিরভাগ পর্যটক উত্তরবঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার, অফবিটের খোঁজে যান। কিন্তু দক্ষিণেও রয়েছে, এমন জায়গা যেখানে মানুষের আনাগোনা কম। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে ডাউরি খালের ছবি। এই শীতে আপনিও বেড়াতে যেতে পারেন এখানে।
পুরুলিয়ার ছোট্ট জায়গা ডাউরি খাল। ২০০৬ সালে খবরের কাগজের পাতায় উঠে এসেছিল ডাউরি খালের কথা। ভরা বর্ষায় এই ডাউরি খালে হড়পা এসেছিল। সেই সময় পাঁচ বন্ধু মিলে বেড়াতে যান পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। সেই হড়পা বানে মৃত্যু হয় তিনজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার। আর দু’জন কোনও রকমে প্রানে বাঁচেন। সেই থেকে ডাউরি খালের নাম অনেকেরই জানা। কিন্তু সেখানে পর্যটকের ভিড় ছিল না কোনওকালেই। কিন্তু বর্তমানে, পুরুলিয়ায় ছুটি কাটাতে গেলে অনেকেই ঘুরে যান ডাউরি।
পুরুলিয়ার অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের অংশ ডাউরি খাল। আজকাল বহু মানুষের ট্রেক করতে আসেন এখানে। আর এই ডাউরি খালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শব্দে বর্ণনা করা কঠিন। খালটা কুমিরের হাঁ করা মুখের মতো দেখতে। আর রাস্তাটাও বেশ দুর্গম। কিন্তু কোনও তোয়াক্কা না করে, অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে অনেকেই চলে আসেন ডাউরি নালাতে। চারদিকে সবুজে ঘেরা জঙ্গল আর ছোট ছোট পাহাড়। উপর থেকে ঝর্নার জল এসে মিশেছে শোভা নদীতে। এটাই ডাউরি খাল।
ডাউরি খালের সৌন্দর্য মন কেড়ে নেওয়া মতো। কিন্তু নালার রাস্তা ভীষণ দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ। পায়ে হেঁটে ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোনও বিকল্প নেই। বাঘমুন্ডির কুদনা গ্রাম থেকে দেড় কিমি দূরে অবস্থিত এই নালা। কুদনা গ্রাম থেকে হেঁটেই যেতে হবে আপনাকে। এছাড়া আপনি জঙ্গলের পথ ধরেও যেতে পারেন নালার কাছে। জঙ্গলে আবার হাতি ভয়ও রয়েছে। ভরা বর্ষায় ডাউরি খালা মোটেই সুরক্ষিত নয়। যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। তাই ডাউরি খাল ঘুরিয়ে দেখানো হয় শীতকালে। এছাড়া গাইড ছাড়া ডাউরি খাল ঘুরতে যাওয়া নিরাপদ নয়। বিকেল পাঁচটা বাজার আগেই নালা ঘুরে চলে আসতে হয়। যে কোনও মুহূর্তে হাতির দলের মুখে পড়তে পারেন।
দুর্গম রাস্তা আর রোমাঞ্চের টানেই অযোধ্যা পাহাড় ঘুরতে গেলে ডাউরি খালও ঘুরে আসছে পর্যটকেরা। এই তালিকায় আপনিও নাম লেখাতে পারেন। অযোধ্যা সার্কিটে একাধিক হোম স্টে, হোটেল রয়েছে, সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোর ভোর পৌঁছে যান কুদনা গ্রাম। এবার এই গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে ডাউরি খাল।