বেড়াতে গেলে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। যাতায়াতের টিকিট ভাড়া, হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়াতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। আর পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে সেটা ২-৩ দিনে সম্ভব হয় না। হাতে অন্তত ৫ দিনে সময় নিয়ে পারি দিতে হয় পাহাড়ে। তাও যদি উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেখানেও ৫ দিনের থাকা-খাওয়াতেই প্রায় ৭,০০০ টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। তবু আমরা সকলেই চাই এমন ডেস্টিনেশনের খোঁজ যা কম খরচে সেরা অনুভূতি এনে দেবে। এমনই এক জায়গার খোঁজ নিয়ে এসেছি আমরা। অল্প দিনের মধ্যে ঘুরে নেওয়া যাবে এবং পকেটেও টান পড়বে না।
যাঁদের কাছে উত্তরবঙ্গ দুধ-ভাতে, তাঁরা সকলেই কমবেশি এই জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত। জায়গার নাম জোড়পোখরি। একটা সময় পর্যটকদের মধ্যে জোড়পোখরি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যত বেশি অফবিট ডেস্টিনেশনের চাহিদা বেড়ে ততই জনপ্রিয় হয়েছে জোড়পোখরি সহ অন্যান্য পাহাড়িগ্রামগুলো। ৭,৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জোড়পোখরি আপনাকে প্রকৃতির কোলে নিরিবিল সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত এই জোরপোখরি প্রকৃতিপ্রেমীদের খুব প্রিয়। একই জেলায় অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও আকাশ ও পাতাল পার্থক্য রয়েছে দার্জিলিং ও জোড়পোখরির মধ্যে। শৈলশহর দার্জিলিং থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটারের পথ জোড়পোখরি। তবু এখানে দার্জিলিঙের মতো কোলাহল বা যান্ত্রিকতা নেই। রয়েছে প্রাকৃতিক নিস্তব্ধতা।
নেপালি ভাষায় ‘জোড়’ কথার অর্থ দুই আর পোখরি মানে হ্রদ। এই অঞ্চলে যজম হ্রদ রয়েছে। কুয়াশার মধ্যে ঢাকা জোড়া সরোবরের কারণেই এর নাম জোড়পোখরি। এই জলাশয়কেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠে একটি পার্ক। ছোট্ট পিকনিকের আয়োজন করা যায় এই পার্কে। পার্কের এক কোণে রয়েছে ভিউ পয়েন্ট। সেখান থেকে মেঘে মোড়া দার্জিলিং, কার্শিয়াং শহরের ল্যান্ডস্কেপ দৃশ্য দেখা যায়। আবহাওয়া পরিষ্কার হলে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘারও দেখা মেলে। যদিও এই কয়েকটি কারণে জোড়পোখরি জনপ্রিয় নয়।
জোড়পোখরির মূল আকর্ষণ হল জোড়পোখরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এ অঞ্চল আসলে ‘স্যালামান্ডার’ নামে পরিচিত। স্যালামান্ডার হল এক ধরনের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির উভচর। জোড়পোখরিতে স্যালামান্ডারের দেখা মেলে। পাইনে ঘেরা নিরিবিলিতে জঙ্গল, পাখির ডাক, কাঞ্চনজঙ্ঘা সব মিলিয়ে অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে জোড়পোখরি।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন-
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন কিংবা শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে জোড়পোখরি চলে যেতে পারেন। দার্জিলিং হয়েও পৌঁছে যাওয়া যায় জোড়পোখরি। জোড়পোখরির খুব কাছেই অবস্থিত দার্জিলিং ও কার্শিয়াং শহর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পর্যটকেরা দার্জিলিঙে রাত কাটিয়ে জোড়পোখরি ঘুরে আসেন। আর যদি জোড়পোখরিতে থাকতে চান, সেক্ষেত্রে এখানে হাতে গোনা ট্যুরিস্ট লজ ও হোমস্টে রয়েছে।