বাঙালি দী-পু-দা তালিকায় যুক্ত হয়েছে আর এক নাম। সিকিম। এখন বাঙালি উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি সিকিমের বিভিন্ন অফবিট জায়গা এক্সপ্লোর করতে চায়। বাঙালির মধ্যে সিকিমের জনপ্রিয়তা বরাবরই। এখন শুধু অফবিট পাহাড়ি গ্রামগুলো সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। কিন্তু পুরনো ডেস্টিনেশনগুলোর চাহিদা এক ফোঁটাও কমেনি। ঠিক যেমন আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগেও বাঙালির কাছে জনপ্রিয় ছিল সিকিমের গুরুদংমার হ্রদ। আজও কিন্তু এই জনপ্রিয়তার একটুও অদল-বদল হয়নি। বরং, গুরুদংমার হ্রদে বেড়াতে যাওয়া ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে অ্যাচিভমেন্টের চেয়ে কম কিছু নয়। যতই হোক এটি ভারত এবং বিশ্বের উচ্চতম হ্রদগুলোর মধ্যে একটি।
সিকিমের মাঙ্গান জেলার তিব্বত ও চিন সীমান্তের খুব কাছেই অবস্থিত গুরুদংমার হ্রদ। প্রায় ১৭,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত গুরুদংমার ভ্রমণ আপনাকে অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারে। সিকিমের পাহাড়ি গ্রাম লাচেনে এক রাত কাটিয়ে যেতে হয় গুরুদংমার। এখান থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার রাস্তা। উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের অভাব বোধ করতে পারেন। কিন্তু হ্রদে পৌঁছালে এর নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যেতে পারে। পিছনে তুষারাবৃত পাহাড় আর সামনে স্বচ্ছ নীল জল। নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি অবধি দেখা যাচ্ছে হ্রদের জলে।
গুরুদংমার যাওয়ার জন্য পারমিট লাগে। গ্যাংটক থেকে পারমিট বানিয়ে গুরুদোংমা হ্রদের উদ্দেশ্যে পারি দিতে হবে। এপ্রিল, মে মাস হল গুরুদংমার যাওয়ার আদর্শ সময়। শীতকাল এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। শীতে এখানে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমে যায়। চারিদিক ভরে যায় সাদা বরফের চাদরে। কিন্তু মজার বিষয় হল, হ্রদের জল সম্পূর্ণভাবে জমে যায় না। হ্রদের একটি অংশে বরফ জমে না। যদিও এর পিছনেও একটি ধর্মীয় কাহিনি রয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং শিখ ধর্মের কাছে এই হ্রদ খুবই পবিত্র। এই গুরুদংমারকে ঘিরে রয়েছে নানা গল্প।
বৌদ্ধদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই এই হ্রদ পরিদর্শন করেছিলেন বৌদ্ধমহাগুরু পদ্মসম্ভব। তিব্বত থেকে ফেরার পথে তিনি এখানে আসেন। যেহেতু স্থানীয়দের একমাত্র জলের উৎস এই হ্রদ এবং এটি সেই সময় শীতে জমে যেত তাই সমস্যায় পড়তেন তাঁরা। এই জলকষ্টের কথা স্থানীয়রা পদ্মসম্ভবকে জানান। তিনি জলের এক অংশ ছুঁয়ে দেন। সেই থেকে এই হ্রদের এক অংশ কখনও হিমায়িত হয় না। শিখদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই হ্রদটি পরিদর্শন করেছিলেন স্বয়ং গুরু নানক। তাই তাঁদের কাছেও এই হ্রদের ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই হ্রদের জল পান করলে মহিলাদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দূর হয়ে যায়। এই হ্রদ আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে।