বাঙালির অন্যতম পছন্দের ডেস্টিনেশনের তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে সিকিম। যদিও এখন সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে থাকা পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ভিড় বেড়েছে, তবু পর্যটকদের কাছে পেলিংয়ের জনপ্রিয়তা কমেনি। কিন্তু এই লেখাটা পেলিংকে নিয়ে নয়। এটা হল পেলিংয়ের কাছেই অবস্থিত রাবডানৎসের গল্প, যেখানে লুকিয়ে রয়েছে সিকিমের ইতিহাস। রাবডানৎসকে অনেকেই ভারতের ‘মাচু পিচু’ বলে থাকেন। কিন্তু কেন জানেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক, সিকিমের এই রাবডানৎসের গল্প…
১৬৭০ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত সিকিমের রাজধানী ছিল রাবডানৎসে। যদিও তার আগে রাজধানী ছিল ইয়াকসামে। ফুনসগ নামগিয়াল ছিলেন সিকিমের প্রথম রাজা, যাকে সিকিমের ভাষায় বলা হয় চোগিয়াল। ১৬৭০-এ যখন ফুনসগ নামগিয়ালের ছেলে তেনসুং নামগিয়ালের রাজা হন তখন তিনি রাজধানী ইয়াকসাম থেকে তুলে নিয়ে যান রাবডানৎসে। এই রাজার তিন বউ ছিল, তিব্বতী, ভুটানি এবং লিম্বু জাতির। ১৭০০-এ তেনসুং মারা যাওয়ার পর রাবডানৎসের সিংহাসনে বসে দ্বিতীয় বউয়ের ছেলে চাদর নামগিয়াল। আর এখানেই তৈরি হয় পারিবাবিক বিবাদ।
ভুটানি স্ত্রীর কন্যা ভুটানের সাহায্যে চাদর নামগিয়ালকে সিংহাসন থেকে উচ্ছেদ করে। চাদর আশ্রয় নেয় তিব্বতের লাসায়। ১০ বছর সেখানে থাকার পর চাদর আবার ফিরে যায় সিকিমে। ততদিনে ভুটান অলিখিত রাজত্ব স্থাপন করে নিয়েছে সিকিমে। চাদর সিকিমে ফিরলে তাঁর সৎ বোন তাঁকে আবার মারার চেষ্টা করে। কিন্তু এবারেও তাঁর পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বরং এবারে চাদর তাঁর সৎ বোনকে গলায় সিল্কের স্কার্ফ দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। যদিও এখানেই শেষ নয় রাবডানৎসের ইতিহাস।
রাবডানৎসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজায় রাজায় যুদ্ধের ইতিহাস, ভাই-বোনের যুদ্ধ, রাজনীতি, খুনের ইতিহাস। এই সব কিছুরই ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায় রাবডানৎসে। যদি রাবডানৎসের ধ্বংসের পিছনে রয়েছে গোর্খা সেনাদের আক্রমণ। আজকের সিকিমে দাঁড়িয়ে এই ধ্বংসাবশেষ দেখলে মনে হবে না এমনও ইতিহাস রয়েছে হিমালয়ের কোলে। কিন্তু সিকিম সরকারের সহায়তায় সুন্দর করে সাজানো রয়েছে এই রাজ্যের ইতিহাস।
রাবডানৎসেতে খুব বেশি পর্যটকদের ভিড় থাকে না। স্থানীয় মানুষের আনাগোনা এখানে সবচেয়ে বেশি। চারিদিক শান্ত। ঘাসের লনের উপর দাঁড়িয়ে শতাব্দী প্রাচীন দেওয়াল। এখানে ইতিহাসের সঙ্গে আপনি প্রকৃতিও উপভোগ করতে পারবেন। এমনই সুন্দর করে সাজানো ঘাসের লন যে এখানে বসে দিনরাত দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। রাবডানৎসের হেলান দিয়ে নিস্পলকে তাকিয়ে থাকতে পারবেন তুষারাবৃত শৃঙ্গের দিকে। রাবডানৎসে গেলে সকাল-সকাল রওনা দিন। সিকিমের ইতিহাসের কোলে বসে সূর্যাস্ত দেখে তবেই হোটেল ফিরবেন।