মেঘালয় নামটার সঙ্গেই ভেসে ওঠে খাসি বা গারো পাহাড়ের গা দিয়ে বেয়ে আসা জলপ্রপাত, স্বচ্ছ নদী ও হ্রদ। পাশাপাশি রয়েছে সবুজ প্রান্তর। চোখ মেললে ধরা দেয় ঢেউ খেলানো পাহাড়। আর এই মেঘেদের দেশ বর্ষায় আরও অপরূপ হয়ে ওঠে। কিন্তু মেঘালয়ের এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেগুলো গতানুগতিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে একদম আলাদা। মেঘালয়েও রয়েছে একটি লুকানো ট্রেকিং রুট। সাধারণত, শিলং, চেরাপুঞ্জি, দাউকি, ডবল ডেকার রুট ব্রিজ, কামাখ্যা মন্দিরের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে মেঘালয় ট্রিপ। কিন্তু এই শ্রাবণে আপনি যদি মেঘালয় ভ্রমণের প্ল্যান করেন তাহলে বাকেটলিস্টে রাখতে পারেন মৌরিংখাঙকে।
অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পাড়ি দিন মৌরিংখাং। বাঁশের তৈরি ব্রিজ। তার উপর দিয়ে ট্রেক করে যেতে হবে। তবেই ধরা পড়বে মেঘের মধ্যে ঢাকা সবুজে মোড়া পাহাড়ের গল্প। মৌরিংখাং পৌঁছানোর জন্য আপনাকে যেতে হবে পূর্ব খাসি জেলার ওয়াখেন গ্রামে। গ্রামে পৌঁছে বাকি পথ আপনাকে হেঁটেই অতিক্রম করতে হবে। অর্থাৎ এখান থেকেই শুরু ট্রেকিং রুট।
মেঘালয়ের এই ট্রেকিং রুট ভারত জুড়ে যে সব ট্রেকিং রুট রয়েছে তার থেকে একদম আলাদা। অবশ্যই আপনাকে পাহাড় পার করতে হবে। কিন্তু একটু অন্যভাবে। পাহাড়ের গা বেয়ে হাঁটার জন্য মৌরিংখাং ট্রেকিং রুটে রয়েছে পাথরের রাস্তা আর বাঁশের তৈরি ব্রিজ। প্রথমে নীচে নামার জন্য আপনাকে ধরতে হবে পাথরের তৈরি ওই সুন্দর রাস্তা। পথে আপনার কানে ভেসে আসতে পারে ঝর্নার শব্দ। আর নীচে নামলে দেখা মিলবে ওয়ারু নদীর।
পাথরের পথ শেষ হলেই দেখা মিলবে বাঁশের তৈরি ওই ঝুলন্ত ব্রিজের। এই ব্রিজের উপর ভরসা করেই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে এক পাহাড় ডিঙিয়ে অন্য পাহাড়ে। এই রাস্তায় আপনার সঙ্গী হবে চারপাশের ঘন সবুজ। আর নীচ দিয়ে বইবে ওয়ারুর নীল জল। এই বাঁশের সেতু তৈরি করেছেন গ্রামের মানুষেরাই। পাহাড় ঘেঁষা এই সেতুই আপনাকে পৌঁছে নিয়ে যাবে মৌরিংখাং-এর শেষে।
৩ থেকে ৪ ঘণ্টা হাঁটার পর অবশেষে দেখা মিলবে মৌরিংখাঙয়ের। একটি ত্রিভুজাকৃতির এক বিশাল পাথর। গ্রামের মানুষেরা মনে করেন, মৌরিংখাং হলেন একজন রাজা, যিনি প্রেমে পড়েছিলেন থিয়াং নামের একটি সুন্দরী পাথরের। নারীর মন জয় করতে যুদ্ধ শুরু হয় মৌরিংখাং ও মওপাথরের মধ্যে। বহু যুগের যুদ্ধের পর জয় লাভ করে মৌরিংখাং। সেই মৌরিংখাং এখন এখানে রয়েছে পাথর আকারে।
মৌরিংখাং পাথরের কাছেও পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে এখানে। সেখানেও ভরসা বাঁশের সিঁড়ি। বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে যদি একবার মৌরিংখাঙয়ে পৌঁছে যান তাহলে দেখতে পাবেন মেঘালয়ের এক অন্য রূপ। এখান থেকে দেখা যায় খাসি পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য। সূর্যাস্তকে সঙ্গী করে আবার ফিরে আসতে হবে ওয়াখেন গ্রামে।