বাতাসে এখন বসন্তের আমেজ। পাতাঝরা ডালে এখন আগুন-রঙা ফুলের বিচ্ছুরণ। পলাশ ফুলের গাছগুলো লালে ভরে গিয়েছে। বসন্ত মানেই পলাশ, শিমুলের মেলা। এই সব ফুলের টানেই প্রতি বছর বাঙালি ভিড় করে পুরুলিয়ায়। তাছাড়া এই সময় দোলেরও ছুটি পাওয়া যায়। তাই দু’রাত্রি তিনদিনের ট্রিপ অনায়াসে প্ল্যান করা যায় পুরুলিয়ায়। জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি, অযোধ্যা পর্যটকদের বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া রঙিন বসন্তে পুরুলিয়া গেলে মাথার ভিতর ঘুরতে থাকে ‘পিঁদাড়ে পলাশের বন, পালাব পালাব মন’। বসন্তে পুরুলিয়া গেলে যেমন মন ভাল হয়ে যায়, তেমই বাজেটের দিক থেকেও ফিট বসে এই ডেস্টিনেশন। এই বসন্তেও যদি পুরুলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে ডেস্টিনেশনে একটু বদল আনুন। শিমুল, পলাশের দেখতে নয়, পুরুলিয়ায় যান সুন্দরবনের টানে। পুরুলিয়া জেলায় সুন্দরবন—শুনতে অবাক লাগলেও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে যোগমায়া সরোবর বা রঞ্জনডি জলাধার। একেই বলা হচ্ছে পুরুলিয়ার ‘মিনি সুন্দরবন’।
ফাগুনের হাওয়ায় লাল পলাশের আগুন দেখতে এখন অনেকেই ভিড় করেন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে। জঙ্গল আর পাহাড়ের যুগলবন্দীর কারণেই এত বেশি জনপ্রিয়তা পুরুলিয়ার এই সব অঞ্চলের। সেই তালিকায় আরও একটা নাম যোগ হয়েছে। যোগমায়া সরোবর বা রঞ্জনডি জলাধার। পর্যটকদের কথায় পুরুলিয়ার ‘মিনি সুন্দরবন’। পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর থানা এলাকায় অবস্থিত এই জলাশয়। এই জলাশয়কে ঘিরে নতুন পর্যটক সার্কিট গড়ে উঠছে এই অঞ্চলে। এ বছর শীত থেকেই এখানে পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। স্থানীয় মানুষেরাও অঞ্চলকে পিকনিক করার জন্য বেছে নিচ্ছেন।
বাঘমুণ্ডী, মুরগুমা, সাহেব বাঁধ ও খয়রাবেড়ার মতোই ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যোগমায়া সরোবর। কিন্তু এই জলাশয়কে ‘মিনি সুন্দরবন’কে কেন বলা হচ্ছে, জানেন? তাহলে কি এখানে কোনও ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে? একদমই নয়। পলাশের দেশে ম্যানগ্রোভে অস্তিত্ব নেই। তবে রয়েছে সোনাঝুরির জঙ্গল। তবে জলাশয় দেখলেই এক ঝলকে মনে পড়ে যাবে সুন্দরবনের কথা। বিগত প্রায় পাঁচ বছর ধরে রঞ্জনডি জলাধারকে কেন্দ্র করে এখানে সাজানো-গোছানোর কাজ চলছে। সেটা গত মরশুম থেকে পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত রয়েছে। এখন এই জলাধারে নৌকাবিহারেরও সুবিধা রয়েছে।
খোলামেলা পরিবেশে কিছুটা সময় নিভৃতে কাটানোর জন্য অনেকেই এই জায়গাকে বেছে নিচ্ছেন। থাকার জন্য কটেজ, অতিথিশালার পরিষেবাও রয়েছে। সুতরাং, রাত্রিযাপনেরও কোনও অসুবিধা এই অঞ্চলে নেই। এই ‘মিনি সুন্দরবন’-এ যাবেন কীভাবে? সেই রাস্তাও সহজ। ট্রেনে চেপে গেলে নামতে হবে পুরুলিয়া কিংবা আদ্রা। সেখান থেকে গাড়িতে সোজা কাশীপুর। কাশীপুর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটারের রাস্তা। দ্বারকেশ্বর নদী পেরিয়ে যেতে হবে। ধটলা মোড় থেকে ডান দিকে আর ১ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন ‘মিনি সুন্দরবন’।
পুরুলিয়ার কাশীপুর রাজরাড়ি পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে শুরু করে পঞ্চকোট রাজপরিবারের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে কাশীপুর রাজরাড়ির সঙ্গে। যোগমায়া সরোবর থেকে এই কাশীপুর রাজরাড়ি খুব বেশি দূর নয়। তবে, দুর্গাপুজোর সময় ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ এখানে। ইচ্ছে হলে একবার ঢুঁ মারতে পারেন এখানেও।