বিশ্বের উচ্চতম গুরুদ্বার অবস্থিত ভারতেই। যেখানে পৌঁছাতে গেলে পেরোতে হয় পাহাড়, নদী, ঝর্না। তবুও সেখানে পৌঁছানো সহজ কাজ নয়। কম করেও ৪ দিনের হাঁটা পথে পৌঁছাতে হয় বিশ্বের উচ্চতম গুরুদ্বারে। এখনও বুঝতে পারছেন না, আমরা কোন জায়গার কথা বলছি? হেমকুণ্ড সাহিব। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত এই হেমকুণ্ড সাহিব। উচ্চতা ১৪,১০০ ফুট। এটাই বিশ্বের উচ্চতম গুরুদ্বার।
শিখদের দশম গুরু গুরু গোবিন্দ সিংকে উৎসর্গ করা এই পঞ্চভুজ গুরুদ্বার। শুধু শিখ নয়, ভারতজুড়ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা এই হেমকুণ্ড সাহিবে আসেন। কিন্তু চাইলে আপনি যেতে পারবেন না হেমকুণ্ড সাহিবে। বছরের নির্দিষ্ট সময়েই হেমকুণ্ড সাহিবে প্রবেশের অনুমতি মেলে। তাছাড়া হেমকুণ্ড সাহিব যেতে গেলে আপনাকে ৪-৫ দিনের ট্রেক করে পৌঁছাতে হয়।
নন্দাদেবী ন্যাশানাল পার্কের অন্তর্গত ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স ট্রেক পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স পেরিয়ে তারপর যেতে হয় হেমকুণ্ড সাহিবে। এই ফুলের উপত্যকায় আপনি ৩০০ টিরও বেশি প্রজাতির ফুল দেখতে পাবেন। পাশাপাশি দেখা মিলবে ব্রহ্ম কমলের। এই ফুলের উপত্যকা থেকে যেতে হয় হেমকুণ্ড সাহিব। জোশীমঠ থেকে শুরু হয় ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স ও হেমকুণ্ড সাহিবের যাত্রা। জোশীমঠ থেকে প্রথমে গোবিন্দঘাট তারপর ঘাঙ্গারিয়া। এই ঘাঙ্গারিয়া হল হেমকুণ্ড সাহিবের প্রথম বেসক্যাম্প। এই ঘাঙ্গারিয়া থেকে ফুলের উপত্যকা ঘুরে পৌঁছে যেতে পারেন হেমকুণ্ড সাহিব।
জুন মাস থেকে শুরু হয় ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স ট্রেক। সেই সময়ই পর্যটকদের খুলে দেওয়া হল হেমকুণ্ড সাহিবের দরজা। জুনের শুরু থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত আপনি হেমকুণ্ড সাহিব যেতে পারবেন। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স মূলত বর্ষাকালের ট্রেক। কিন্তু অক্টোবর থেকে হেমকুণ্ড সাহিবে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং শীতে বিশ্বের উচ্চতম গুরুদ্বার ঢাকা পড়ে যায় বরফের সাদা চাদরে।
হেমকুণ্ড সাহিবের পাশেই রয়েছে হিমায়িত হ্রদ লোকপাল। সাতটি পর্বত শৃঙ্গ ঘিরে রয়েছে এই হ্রদ। শোনা যায়, গুরু গোবিন্দ সিং এই হ্রদের তীরে ধ্যান করেছিলেন। তাই বলা হয়, এই হিমায়িত হ্রদে পা ডোবালে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। অনেকেই এই হেমকুণ্ড সাহিবের জলও বোতলে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
বিশ্বের উচ্চতম গুরুদ্বারেও রয়েছে লঙ্গরখানা। সেখানে ডাল, খিচুড়ি, চা সব কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু হেমকুণ্ড সাহিব আপনাকে পৌঁছাতে হবে দুপুরের আগে। দুপুর ২টো পর্যন্ত হেমকুণ্ড সাহিবের দরজা খোলা থাকে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের জন্য। তাছাড়া ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় আবহাওয়া যে কোনও সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই বিপদ এড়াতে ভোরবেলা ট্রেক শুরু করতে হবে এবং দুপুরের মধ্যে হেমকুণ্ড সাহিব ঘুরে আবার নিচে নেমে আসতে হবে।