দক্ষিণ সিকিমের রাবাংলা থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ছোট্ট একটি মনেস্ট্রি। চারিদিক ঘেরা রঙিন তিব্বতী পতাকায়। অজানা অচেনা পাহাড়ি জনপদের কোলে অবস্থিত এই মনেস্ট্রি স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় ডলিং নামে। রাবাংলার মনেস্ট্রির মতো জনপ্রিয় নয় ডলিং কিন্তু এই গুরুত্ব রাবাংলার মনেস্ট্রির থেকে মোটেই কম নয়। বরং ডলিং হল দক্ষিণ সিকিমের সেই গ্রাম, যা প্রকৃতির তার সবকিছু ঢেলে সাজিয়েছে।
দক্ষিণ সিকিমের কোলে ৬,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত ডলিং খুব একটা জনপ্রিয় নয় পর্যটক মহলে। ডলিংয়ের যেটুকু পরিচিতি রয়েছে তার শুধু মনেস্ট্রির জন্য। কিন্তু ডলিংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ মনোমুগ্ধকর। ডলিংয়ের কোলে বসে আপনি আপনি দেখা পাবেন মাউন্ট নার্সিংয়ের। এখানে পাখিদের কলতান আপনার কানকে ব্যস্ত রাখবে সারাদিন।
ডলিংয়ের এই মঠটি ১৭১৮ খ্রিস্টাব্দে লামা রিগডজিন লংইয়াং প্রতিষ্ঠা করেন, যিনি নাইংমাপা সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে সিকিমের ইতিহাস। ১৭১৭ থেকে ১৭১৮ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গল শাসক জুংগারের তিব্বত আক্রমণের সময় লামা দোর্জেলিংপা এবং তাঁর পুত্র রিগডজিন লংইয়াং তিব্বত থেকে এখানে এসেছিলেন এবং এই মঠটি তৈরি করেন। ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে মঠটি ১৮৪০, ১৯২০ এবং ১৯৮৪ সালে পুনরায় নির্মিত হয়। তবে এখানে আজও লামা রিগডজিন লংইয়াং-এর বংশধররাই বাস করেন।
ডলিংয়ের মনেস্ট্রিতে পৌঁছতে গেলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছোটোখাটো ট্রেক করতে হবে আপনাকে। সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের ঢালে ৫০০টিরও বেশি সিঁড়ি রয়েছে। এটা অতিক্রম করেই পৌঁছতে হবে মনেস্ট্রির কাছে। মনেস্ট্রির কাছে রয়েছে ছোট্ট হ্রদ। আর সমগ্র জায়গাটা ঘেরা তিব্বতের প্রার্থনা পতাকা দিয়ে। আর মনেস্ট্রি ভিতরের দেওয়ালে রয়েছে মঞ্জুশ্রী, মনিলহাখং, বজ্রপানি এবং দোরজেলিংপার ছবি।
নীলচে আকাশের প্রাচীন মনেস্ট্রি আর তুষারাবৃত মাউন্ট নরসিংয়ের দৃশ্য মোহিত করবে আপনাকে। প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের অপরূপ মেলবন্ধনের দেখা পাওয়া যায় ডলিংয়ে। একঘেঁয়ে জীবন থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য ডলিং হল সেরা ডেস্টিনেশন। যেহেতু ডলিংয়ের খুব কাছে রাবাংলা, তাই ডলিংয়ে রাত না কাটালেও রাবাংলা থেকে ঘুরে নিতে পারেন ডলিং। তবে মাউন্ট নার্সিংয়ের ছায়ায় রাত কাটানোর জন্য ডলিংয়েও রয়েছে হোমস্টে।
ডলিংয়ের কাছেপিঠে বেশ অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দক্ষিণ সিকিম গেলে ডলিংয়ের পাশাপাশি ঘুরে নিতে পারেন টেমি টি গার্ডেন, নামচি চারধাম, রালোং মনাস্ট্রি,পেলিং, খেচিপেরি লেক, সিংসোর ব্রিজ, রাবদানসে রুইনস। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ডলিংয়ের দূরত্ব মাত্র ১২৮ কিলোমিটার। পেলিং কিংবা রাবাংলা থেকে অনায়াসে ঘুরে নিতে পারেন ডলিং।