বিকাল গড়ানো মাত্র নিত্যদিনের যাত্রীরা ভিড় করেন কলকাতার ঘাটে-ঘাটে। শোনা যায় স্টিমারের আওয়াজ। এগুলো যাবে হাওড়ার ফেরিঘাটে। তবে এই স্টিমার চলে ডিজেলে। একটা সময় ছিল যখন কয়লার আঁচে স্টিমার চলত। আর সাইকেলের চাকার মতো দু’পাশে চার থেকে আট জোড়া প্যাডেল ওঠা-নামা করে এগিয়ে চলত গন্তব্যের দিকে। সেটা ছিল প্যাডেল স্টিমার। সেই প্যাডের স্টিমারের ভোঁ ভোঁ আওয়াজ ৭০ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে হাওড়া-কলকাতাবাসী শোনেনি। তবে খুব দ্রুত হুগলি নদীর বুকে আবার শুরু হতে চলেছে প্যাডেল স্টিমার। কিন্তু এবার আর পুরনো কলকাতার মতো নিত্যদিনের সঙ্গী হবে না এই ঐতিহ্যবাহী স্টিমার। বরং গঙ্গাবক্ষে হেরিটেজ ক্রুজ ভ্রমণে আবার নামতে চলেছে ‘পিএস ভোপাল’।
‘পিএস ভোপাল’ হল প্রায় ৭৮ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের প্যাডেল স্টিমার। ১৯৪৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল ‘পিএস ভোপাল’কে। এই স্টিমারটি এখনও অক্ষত রয়েছে কলকাতা বন্দরে। ‘পিএস ভোপাল’কে আবার নবরূপে সাজিয়ে তুলতে খরচ রয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। দুর্গা পুজোর আগেই গঙ্গার বুকে হেরিটেজ ক্রুজ ভ্রমণে নামতে চলেছে ‘পিএস ভোপাল’।
আগে হাওড়া-কলকাতা যাতায়াত করতে বহু মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল এই প্যাডেল স্টিমার। এমনকী ঢাকা-কলকাতার নৌপথেও চলত প্যাডেল স্টিমার। হুগলি নদীর বুকে অনেক বছর আগেই প্যাডেল স্টিমারের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে। তবে, পদ্মায় এখনও দেখা মেলে প্যাডেল স্টিমারের। ঢাকায় প্রায় ৯০ বছর ধরে ব্রিটিশ আমলের প্যাডেল স্টিমার এখনও প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ চলতে পারে। যদিও সেগুলো এখন ডিজেলে চলে। তা-ই আশা করা হচ্ছে, গঙ্গাবক্ষেও আবার চলবে এই ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার।
কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা ডকের ২২ নম্বর বার্থে এই মরচে পড়া প্যাডেল স্টিমারকে পুনরুদ্ধার করার। এই স্টিমার হচ্ছে একমাত্র বেঁচে থাকা প্যাডেল স্টিমার যা কলকাতার ঐতিহ্য বহন করে। এই স্টিমারের সেই ঐতিহ্যগত মান বজায় রেখেই এতে পুনরুদ্ধার এবং সংস্কার করা হয়েছে। সরকারি ও এক বেসরকারি সংস্থার মেলবন্ধন স্টিমারটি তৈরি জলে নামতে।
ইস্টার্ন নেভিগেশন প্রাইভেট লিমিটেড নামক ওই বেসরকারি সংস্থার হাতে হেরিটেজ স্টিমারটি তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৫ বছরের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার গঙ্গাবক্ষে কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটক টানতেও সুবিধা হবে।
আগে এই প্যাডেল স্টিমারটিতে ২৫-৩০ জন যাত্রী সওয়ারি করতে পারত। কিন্তু এই নতুন ‘পিএস ভোপাল’ সেজে অন্যরূপে। এখন হেরিটেজ ক্রুজ ভ্রমণে যেতে পারবেন ১০০ জন। তিনতল বিশিষ্ট এই স্টিমারে থাকছে প্রদর্শনী হল সহ ওপেন ডেক, ডাইনিং এরিয়া। প্রদর্শিত হবে ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে সংগ্রহ করা স্টিমারের ইতিহাস। স্ট্র্যান্ড রোড থেকে ‘পিএস ভোপাল’ শুরু করবে তার যাত্রা। দক্ষিণেশ্বর ঘুরে যাত্রা হবে খিদিরপুর ডকের কাছে ইন্ডেনচার মেমোরিয়ালে।