ঘিঞ্জি ‘শহর’ হলেও মন কেড়ে নেয় আলমোড়া। তবুও থেমে থাকার পথ নেই। এই পাহাড়ি রাস্তা ঠিক কোনও জায়গায় গিয়ে শেষ হয়েছে তারও হদিশ নেই। তবু পরের গন্তব্যের জন্য বেরিয়ে পড়া। পথে আবারও সঙ্গী সেই তুষারাবৃত হিমালয়ের চূড়া আর ওক-পাইনের সমাহার।
পথের সঙ্গে জাঁকিয়ে বসছে শীত। দিনের আলোয় রওনা দিয়ে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালানো বেশ কঠিন। তার ওপর বিনসরের জঙ্গল। তেন্দুয়ার ভয় রয়েছে। তবুও হিমালয়ের প্যানারমিক ভিউ দেখতে বিনসরে একটা দিন থাকতেই হবে।
আলমোড়া থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বিনসর। কুমায়নের কোলে অবস্থিত হিমালয়ের আরেকটি লুকানো রত্ন। তবে বিনসরের ইতিহাস বেশ পুরনো। রাজা-মহারাজাদের গল্প শুরু হয় এই বিনসরেই। বিনসর ছিল চাঁদ রাজাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। এঁরাই সপ্তম থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন কুমায়নে।
বিনসরে পূজিত হন মহাদেব। ধর্মীয় বিশ্বাসও জড়িত রয়েছে এই পাহাড়ি শহরের সঙ্গে। স্থানীয়রা মনে করেন, এক সময় বিনসরের রাজা এবং স্থানীয় দেবতা গোলুর মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে গোলু দেবতার শিরশ্ছেদ করা হয় এবং গোলু দেবতার মাথা এসে পড়ে এই বিনসরের কাছে কাপারকাহানে। বিনসর- যার বাংলা অর্থ হল ‘মুণ্ডুহীন’।
যদি আপনি বিনসরে যান, মনে হবে ২,৪২০ মিটার উচ্চতায় কেউ যেন নিশ্চুপে, ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। আলমোড়ার প্রাচীন পাহাড় যতটাই কোলাহলে ভরা, বিনসর তার থেকে শান্ত, নিরিবিলি একটি জায়গা। তবে এই বিনসর পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় দুটি কারণে- প্রথমত এখান থেকে হিমালয়ের একটি প্যানোরামিক দৃশ্য অন্বেষণ করা যায় এবং অন্য কারণ হল বিনসর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
আলমোড়া থেকে যতই উত্তর-পূর্ব দিকে যাওয়া হয়, পঞ্চচুল্লির দৃশ্য ততই স্পষ্ট হতে থাকে। এরই এক ঝলক দেখা যায় বিনসর থেকেও। তবে শুধু পঞ্চচুল্লি নয়, এর সঙ্গে কেদারনাথ, চৌখাম্বা, ত্রিশূল, নন্দাদেবী, নন্দকোট, মীরাঘুঁটি, শিবলিংয়ের মনোরম দৃশ্য অন্বেষণ করা যায় বিনসর থেকে। এর জন্য আপনাকে যেতে বিনসর জিরো পয়েন্টে। সূর্যের প্রথম কিরণ যখন হিমালয়ের চূড়ার ওপর পড়ে, বিনসর থেকে সেই দৃশ্যই মন কাড়ে পর্যটকদের। সুতরাং বিনসরে গেলে জিরো পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য কোনও ভাবেই মিস করা চলবে না।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট্ট ট্রেক করা যেতে পারে বিনসরের জঙ্গলে। চাইলে জঙ্গল সাফারিও করতে পারেন এখানে। বিনসরের জঙ্গলের জীববৈচিত্র্যও মনোমুগ্ধকর। জঙ্গলে ঢোকার আগে থেকেই আপনার কানকে ব্যস্ত রাখবে নাম জানা বহু পাখি। ওক, পাইন, দেবদার গাছে ঢাকা সবুজ ঘন জঙ্গল। পক্ষী প্রেমীদের কাছে এই বিনসরের জঙ্গল স্বর্গোদ্যান। চিতাবাঘ, বন্য হরিণ, হিমালয়ান গোরাল, হিমালয়ের শিয়াল, দোয়েল, ম্যাগপাই, লাফিং থ্রাশ সহ নানা পশু পাখির বাস এই বিনসরের জঙ্গলে।
তবে সন্ধ্যের বিনসর একটু অন্যরকম। ঝিঁ-ঝিঁর ডাক তো শোনা যায়ই, তার সঙ্গে নীচে আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে আলমোড়া শহর। ওপরে বসে সন্ধ্যের পাহাড়ি শহরের দৃশ্য এক অন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয় জীবনে। তবুও থেমে থাকার জো নেই। কারণ ভোরের আলোর সঙ্গে নতুন গন্তব্যের সূচনা করতে হবে আবারও।
আরও পড়ুন: Ranikhet-Almora: সরলতা আজও ধরা দেয় এই আলমোড়ার পাহাড়ে! মন পড়ে থাকে রানির দেশে