বাঙালি দী-পু-দা’র গন্ডি পার করে ফেললেও পাহাড়ের মায়া ত্যাগ করবে না। হাতের কাছে মায়া জড়ানো উত্তরকন্যার এত অফবিট থাকতে আর কেনই বা করবে। একটা সময় ছিল যখন গ্রীষ্মের ছুটি হোক বা পুজোর ছুটি, বাঙালি ছুট দিত দার্জিলিঙয়ে। তারপর দার্জিলিঙয়ের কাছে মিরিক জনপ্রিয় হতে শুরু করলে। এখনও দার্জিলিং গেলে অনেকেই একটা রাত কাটিয়ে যান মিরিকে। কিন্তু ‘অফবিট’ আর নেই এই মিরিক। কিন্তু মিরিক থেকে ঢিলে ছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে তাবাকোশি। হাল ফ্যাশনের যুগে উত্তরকন্যার কোলে লুকিয়ে থাকা যে সব পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন পর্যটনদের আনাগোনা বাড়ছে, তাদের মধ্যেই অন্যতম এই তাবাকোশি। পূর্ব হিমালয়ের কোলে রাংভাং নদীর উপর এক ঘুমন্ত গ্রাম তাবাকোশি।
ব্যস্ত আর ঘিঞ্জির তালিকায় নাম লেখানো মিরিক থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরত্বে লুকিয়ে রয়েছে তাবাকোশি। এখন উত্তরবঙ্গের অন্যতম অফবিট ডেস্টিনেশনগুলোর মধ্যে একটি। দুটি নেপালি নাম নিয়ে গঠিত ‘তাবাকোশি’। ‘তাম্বা’ যার অর্থ তামা আর ‘কোশি’ মানে নদী। রাংভাং নদীর উপর ঘন জঙ্গলকে দেখে মনে হয় যেন নদীর ওপর তামার দেশ, এখান থেকে গ্রাম নাম ‘তাবাকোশি’। ঘন জঙ্গল বলতে এখানে রয়েছে পাইন, বার্চের সমাহার। কিন্তু জঙ্গলের চেয়েও তাবাকোশিতে বেশি মন কাড়বে সবুজে মোড়া চা বাগান। আর শীতের দিনে নজর কাড়বে উপত্যকা জুড়ে কমলালেবুর বাগান।
মূলত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই বার বার পর্যটকরা ফিরে আসেন এই পাহাড়ি গ্রামে। উত্তরঙ্গের জনপ্রিয় গোপালধারা চা বাগানের লাগোয়া জায়গা জুড়েই অবস্থিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি। জোড়পোখরি, লেপচাজগত, সিমনা ভিউ পয়েন্ট, পশুপতির মার্কেট, গোপালধারা চা বাগান, মিরিক লেক, মিরিক মনেস্ট্রি এবং আরও নানা জায়গা ঘুরে নিতে পারেন তাবাকোশিতে দু’দিন থেকে।
ইচ্ছা হলে সময় কাটাতে পারেন রাম্মামখোলা নদীর পারেও। পক্ষী প্রেমীদের স্বর্গরাজ্য এই তাবাকোশি। তবে এখানে শান্ত, শীতল, নৈসর্গিক পরিবেশই বেশি আকর্ষণীয়। এই অঞ্চলের উচ্চতা মাত্র ৩,০০০ ফুট। সুতরাং শীতকালে যে খুব ঠান্ডা পড়ে তাও নয়। আবার গরমেও ঘাম হবে না এখানে এলে।
কীভাবে যাবেন-
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে তাবাকোশির দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। বাগডোগরা দিয়ে যেতে চাইলে সেই সুযোগও রয়েছে এখানে। বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা পৌঁছে যেতে পারেন তাবাকোশি। দু’দিনের হাওয়া বদলে আপনার মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য।
কোথায় থাকবেন-
এখানের চা বাগানের সঙ্গেই রয়েছে একাধিক হোমস্টে। মূলত চা বাগানের মালিকরাই এই হোমস্টেগুলোর মালিক। এখানে থাকা, খাওয়া মিলিয়ে জনপ্রতি রোজ খরচ হতে পারে ১২০০-১৫০০ টাকা।