কোভিড পরিস্থিতির পর থেকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ নানা মডেল গ্রহণ করে চলেছে। ওয়ার্ক ফ্রম ডেস্টিনেশন, স্লিপ ট্যুরিজম, রেস্টকেশনের মতো বিষয়গুলো জনপ্রিয় হয়েছে। তার সঙ্গে মানুষের মধ্যে বেড়ে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। তবে অ্যাডভেঞ্চার মানেই যে রিভার রাফটিং কিংবা প্লারাগ্লাইডিং, স্কাই ড্রাইভিং নয়। পর্যটনের দুনিয়ায় অ্যাডভেঞ্চারের আরও এক নাম হল ডার্ক ট্যুরিজম। ভারতে ডার্ক ট্যুরিজম এখনও জনপ্রিয় হয়নি। ‘ভূতুড়ে জায়গা’ বা ‘ঐতিহাসিক স্থান’ নামেই জনপ্রিয় ভারতে ডার্ক ট্যুরিজম সাইটগুলো। কিন্তু বিশ্বের এমন বেশ কিছু ডার্ক ট্যুরিজম সাইট রয়েছে, যেখানে অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে মানুষ হাজার-হাজার ডলার খরচ করে।
ডার্ক ট্যুরিজমের কী এবং কেন?
কোনও এক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মানুষের হিংসা ও রাজনীতির কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা অর্থাৎ যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল, সেখানেই হয়ে থাকে এই ধরনের ট্যুর-এর বন্দোবস্ত। যেখানে প্রবেশ করা মাত্র হয়তো গা-ছমছমে অনুভূতি হতে পারে আপনার। তবে অবশ্যই সেখানে চাক্ষুষ করবেন ইতিহাসের কিছু ভয়ঙ্কর নিদর্শন। সেই জায়গায় বেড়াতে যেতে পারেন আপনিও। আর সেটাই হবে ডার্ক ট্যুরিজম। যে স্থান অতীতে ভয়াবহ কোনও ঘটনার সাক্ষী থেকেছে, ইতিহাসের বইয়ের পাতায় সেসব জায়গার গল্প পড়েছেন, সেই জায়গার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। আর সেই জায়গাই ডার্ক ট্যুরিজমের অংশ। সুনামি বা ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে গিয়েছে গোটা শহর কিংবা মানুষের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে একটা আস্ত সভ্যতা, সেটাই ডার্ক ট্যুরিজম সাইট। অর্থাৎ যে স্থানের সঙ্গে ট্র্যাজেডি জড়িয়ে রয়েছে। এমন ডার্ক ট্যুরিজমের সাইট বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি রয়েছে।
বিশ্বের জনপ্রিয় ৫টি ডার্ক ট্যুরিজমের সাইট-
১) নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ৯/১১-এর জঙ্গি আক্রমণ আমেরিকার পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। আমেরিকার মানুষ এখনও সেই ‘নাইটমেয়ার’-এর কথা ভুলতে পারে না। সেই গাউন্ড জিরো এখন এটা ডার্ক ট্যুরিজমের অংশ।
২) রাশিয়ার আক্রমণে এখন ইউক্রেনের শহরগুলোর চেহারা পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই ইউক্রেনে রয়েছে একটি ডার্ক ট্যুরিজম সাইট। ইউক্রেনের চেরনোবিল। পারমাণবিক বিপর্যয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে গোটা শহর। এখনও ওই এলাকার মানুষ ক্যানসার সহ নানা ধরনের রোগে ভুগছেন।
৩) রওয়ান্ডার মুরাম্বি জেনোসাইড মেমোরিয়াল ডার্ক ট্যুরিজমের অংশ। ১৯৯৫ সালের ২১ এপ্রিল-এর আগে অবধি এটি ডার্ক ট্যুরিজমের অংশ ছিল না। এখানে ১০০ দিনের মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তার পরই এটি হয়ে ওঠে একটি ডার্ক ট্যুরিজম সাইট।
৪) জাপানের হিরোশিমার গল্প মোটামুটি সকলেরই জানা। কিন্তু এটা কি জানেন, এখন এই জায়গায় মানুষ বেড়াতে যান। কারণ হিরোশিমাও এখন একটি ডার্ক ট্যুরিজম সাইট। ১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট পরমাণু বোমা ফেলা হয় শহরে। প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। যাঁরা প্রাণে বাঁচেন, তাঁদের মধ্যেও দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
৫) বুদাপেস্টের দানিউব নদীর তীরে রাখা ৬০ জোড়া জুতো। হাঙ্গেরির ইতিহাসে এই জায়গার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হাজার-হাজার ইহুদিকে এই জায়গা থেকে মেরে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪০ সালে এখানে লোহার ৬০ জোড়া জুতো তৈরি করা হয় স্মারক হিসেবে। এটি এখন বিশ্বের অন্যতম ডার্ক ট্যুরিজম সাইট।