বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। পুজো শেষ হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিয়ে বাড়ি মরশুম। আর দু’সপ্তাহ পরেই পার্ক স্ট্রিট সেজে উঠবে আলোতে। কিন্তু শহরে যে মেলাও চলছে, সেটা কি জানেন? বাঙালি বরাবরই মেলা ভালবাসে। সে বইমেলা হোক বা চড়কের মেলা। তবে, এখন শহরের একপ্রান্তে চলছে চলচ্চিত্র উৎসব আর অন্যপ্রান্ত হস্তশিল্পের মেলা। যাঁরা হাতের তৈরি জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজাতে ভালবাসেন, তাঁরা একবার হলেও ঢুঁ মারেন হস্তশিল্পের মেলায়। আর যাবেন না-ই বা কেন! বাংলার প্রতিটা জেলার বিশেষত্ব এক মাঠের মধ্যে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, পুরুলিয়া না গিয়েও পাবেন ছৌ মুখোশ, আবার বাঁকুড়ার টেরাকোটাও মিলবে এখানে।
গত ২৪ নভেম্বর থেকে নিউটাউনের ইকো পার্কে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হস্তশিল্পের মেলা। চলবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সপ্তাহান্তে যেতে পারেন হস্তশিল্পের মেলায়। হাতের তৈরি জিনিসপত্র দিয়ে বাড়ি সাজাতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের কাছে এই হস্তশিল্পের মেলা কিছুটা স্বর্গোদ্যানের মতো। হরেক রকমের জিনিস মেলে মেলায়। একটু দামদর করে কিনে ফেলতে পারলেই মন খুশি।
কলকাতায় হস্তশিল্পের মেলার বয়স খুব বেশি নয়। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে হস্তশিল্পের মেলা বইমেলার মতোই জনপ্রিয়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতি বছর শীতকালে শহরের একপ্রান্তে হস্তশিল্পের মেলা বসে। মূলত বাংলার কুটির শিল্পকে তুলে ধরা হয় এই মেলার মাধ্যমে। বেত, কাঠের আসবাবপত্র থেকে ধনিয়াখালি, বালুচরি শাড়ি সবই পাওয়া যাচ্ছে হস্তশিল্পের মেলায়।
বাংলার প্রতিটা জেলার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলোই তুলে ধরা হয় হস্তশিল্পের মেলায়। যেমন পুরুলিয়ার ছৌ শিল্প, বর্ধমানের ডোকরা, পূর্ব মেদিনীপুরের পটচিত্র, মুর্শিদাবাদের সিল্ক, দার্জিলিংয়ের উলের তৈরি জামা-মাফলার সবই পাওয়া যাচ্ছে হস্তশিল্পের মেলায়। মেলায় প্রতিটা জেলার নিজস্ব দোকান রয়েছে। এছাড়াও দেখতে পাবেন মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে মাদুর বিছিয়ে বিক্রিবাটা চলছে হাতে তৈরি জিনিসের। প্রতিটা স্টলেই একদল মানুষ এক মনে তৈরি করে চলেছেন কোনও না কোনও সামগ্রী। ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার স্টল রয়েছে হস্তশিল্পের মেলায়। ভোজনরসিক বাঙালিদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার সুবিধাও রয়েছে।
রাজ্যের ২৩টি জেলার শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছেন এই মেলায়। মেলায় ৫০টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। প্রতিটা প্যাভিলিয়নে প্রায় ৪০টি করে স্টল রয়েছে। যদি ইকো পার্কের ১ নং গেট দিয়ে মেলায় ঢোকেন, খোলা মাঠের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩০০০ স্টল। গত বছর এই মেলায় ৬২ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এ বছর ১০ দিনেই পেরিয়েছে ২০ কোটি টাকা। এখনও দুটো উইকএন্ড বাকি। ব্যবসা ১০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।