বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানিং হলেই টিকিট কাটার পরই শুরু হয়ে যায় হোটেল খোঁজা। এখন যেহেতু অনলাইনেই হোটেল বুক করা যায়, তাই রেটিং থেকে শুরু করে ঘর, পরিষেবা সবকিছু যাচাই করে নেওয়া যায়। বেশিরভাগ মানুষের কাছে হোটেল রুম এমন হওয়া চাই, যে সেখানে ঘুমটা ভাল হবে। এবার এমন হোটেলের ছবি ঘোরাফেরা করছে নেটদুনিয়ায়, যেখানে আপনার ঘুম হবে গভীরে। ঘুম কতটা গভীর, তা জানা না থাকলেও, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৭৫ ফুট গভীরে ঘুমনোর সুযোগ রয়েছে এই হোটেল। সম্প্রতি নেটমাধ্যমে উঠে এসেছে বিশ্বের ‘গভীরতম হোটেল’। ব্রিটেনের ওয়েলসে খোলা হয়েছে বিশ্বের ‘গভীরতম হোটেল’।
অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বহু মানুষ পাড়ি দেন পাহাড়-সমুদ্র-জঙ্গলে। কিন্তু মাটির নিচে বিলাসবহুল হোটেলে থাকার সুযোগ খুব কম। তাও ভূপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৭৫ ফুট বা ৪১৯ মিটার নিচে। সম্প্রতি ব্রিটেনের ওয়েলসে স্নোডোনিয়া পাহাড়ের নিচে খোলা হয়েছে এই হোটেল। কিন্তু এই হোটেল আগে ছিল স্টে পাথরের পরিত্যক্ত খনি। সেই খনিই এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের ‘গভীরতম হোটেল’। আর হোটেলের নাম রাখা হয়েছে ‘ডিপ স্লিপ’, অর্থাৎ ‘গভীর ঘুম’।
যাঁরা সবসময় অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় মুখিয়ে থাকেন, তাঁদের জন্য আদর্শ এই হোটেল। যদিও নির্মাতাদের মতে, এটা কোনও হোটেল নয়। এটা হল ‘রিমোট-ক্যাম্প অ্যাডভেঞ্চার এক্সপেরিয়েন্স’। কারণ এই হোটেলে পৌঁছাতে গেলে আপনি ৪৫ মিনিট ট্রেক করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এই ট্রেকিং রুটের মধ্যেও আপনি বেশ কিছু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারবেন। খনিতে কাজ চলার সময় মাটি-পাথর কেটে খাড়াই রাস্তা বানানো হয়েছে। সেই পথ ধরে, ক্ষয়ে যাওয়ার সেতুর উপর দিয়ে, দড়ি বেয়ে নামতে হবে নিচে। কিন্তু ট্রেকিংয়ের জন্য আপনাকে আলাদাভাবে সাজ-সরঞ্জাম নিতে হবে। হেলমেট, টর্চ, ওয়েলিংটন বুট নিতে হবে।
১৮১০ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত খনিতে কাজ চলেছিল। তখন শ্রমিকেরা যে পথ ধরে কাজ করতেন, সেটাই এখন হোটেলে যাওয়ার রাস্তা। প্রায় ১ ঘণ্টা হাঁটার পর দেখতে পারেন ইস্পাতের বড় দরজা। এটাই ‘ডিপ স্লিপ’-এর প্রবেশদ্বার। পৌঁছানো মাত্র পানীয়ের সঙ্গে আপনাকে স্বাগত জানানো হবে। আর ক্লান্তি দূর করার জন্য রয়েছে পিকনিক টেবিলে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য রয়েছে জলের ব্যবস্থা। সেই জল আসে ঝর্না বেয়ে। আর তারপরেই গভীর ঘুম।
হোটেলের ভিতর ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কিন্তু আপনাকে গরম পোশাক বইতে হবে না। সেসব মিলবে হোটেলের কক্ষে। তাছাড়া রুমের দেওয়াল এমনভাবেই তৈরি যে ঘরের ভিতর শীত করবে না। ‘ডিপ স্লিপ’-এ রয়েছে চারটি প্রাইভেট টুইন-বেড কেবিন এবং একটি ডাবল বেড-সহ ‘রোমান্টিক’ গ্রোটো রুম। আপনি যাতে খনির মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন, তার জন্য এখানে রয়েছে কম-ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক আলো। সেগুলো মাত্র ১২ ভোল্টের ব্যাটারিতে চলে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, মাটির ৪১৯ মিটার নিচেও আপনি পাবেন ওয়াইফাই-এর সুবিধা।
সপ্তাহে মাত্র ১ দিন আপনি রাত কাটাতে পারবেন বিশ্বের গভীরতম হোটেলে। শুধু শনিবার রাতে পর্যটকদের জন্য ‘ডিপ স্লিপ’ খোলা থাকে। ‘ডিপ স্লিপ’ যাওয়ার জন্য শনিবার বিকেল ৫ টার মধ্যে ব্লেনাউ এফফেস্টিনিয়োগ শহরের কাছে গো বেলোর বেসে আপনাকে পৌঁছাতে হবে। সেখানে একজন গাইড আপনার জন্য অপেক্ষা করবে, যিনি আপনাকে নিয়ে যাবেন বিশ্বের গভীরতম হোটেলে। সেই গাইডও সেদিন আপনার সঙ্গে খনিতেই রাত কাটাবেন। রবিবার সকালে আপনার জন্য ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করে দেবেন, আবার আপনাকে নিয়ে উঠে আসবেন উপরে।
তবে, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একদমই এলাহি আয়োজন নেই ‘ডিপ স্লিপে’। ট্রেকিং গেলে যে সব সাধারণ জলখাবার সঙ্গে নিয়ে যান, সেগুলোই মিলবে এখানে। আর পাবেন গরম পানীয়। দু’জনের জন্য একটি প্রাইভেট কেবিনের ভাড়া ভারতীয় মূল্যে ৩৬,২৫০ টাকা এবং গ্রোটোর ভাড়া ভারতীয় মূল্যে ৫৬,৯৬০ টাকা।