কথায় রয়েছে, ‘বন্যরা বনে সুন্দর’। তবু আমরা তাদের বন্দী করে রাখি চার দেওয়ালের মধ্যে। চিড়িয়াখানায় সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থাকলেও বন্যজন্তুদের খাঁচায় বন্দী করে রাখা কখনওই প্রাণী সংরক্ষণের সেরা উপায় হয় না। ধরুন ৩২ বছর ধরে যদি কাউকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়, তার মনের অবস্থা কেমন হবে? ঠিক একই কষ্টে ভুগছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুখী’ গরিলা। প্রায় ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি খাঁচায় বন্দী রয়েছে ওই গরিলা। আজও চেয়ে রয়েছে সে মুক্তির আশায়।
থাইল্যান্ডের প্রাণী অধিকার কর্মীরা চেষ্টা করেও ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুখী’ গরিলাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এই গরিলাটি ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি মলের উপর নির্মিত চিড়িয়াখানায় বন্দী রয়েছে। চিড়িয়াখানা মালিকের দাবি ৭৮০,০০০ ডলার না দিলে ছাড়া হবে না ওই গরিলাকে। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৬.৪ কোটি।
নিউইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বয়স্ক গরিলার নাম ‘বুয়া নোই’, যার অর্থ ছোট্ট পদ্ম যা বিশুদ্ধতা এবং শক্তির প্রতীক। মাত্র এক বছর বয়সে এই পুরুষ গরিলাকে ব্যাংককের পাটা শপিং মলের চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। তখন ১৯৯০ সাল। সেই থেকে এই ‘বুয়া নোই’ বন্দী রয়েছে খাঁচায়।
অন্য চিড়িয়াখানার মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয় পাটা শপিং মলের চিড়িয়াখানা। ২০১৫ সাল থেকে থাইল্যান্ড সরকার এবং পশু অধিকার গোষ্ঠী পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস (PETA) যৌথ উদ্যোগে চেষ্টা করছে ‘বুয়া নোই’কে উদ্ধার করার। কিন্তু ৬ কোটি টাকা না দেওয়া হলে ছাড়া হবে না গরিলাকে।
পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস (PETA) ব্যাংককের পাটা শপিং মলের চিড়িয়াখানাকে বিশ্বের সবচেয়ে দুঃখজনক স্থানগুলো মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেছে। সেখানে প্রায় ৩৩ বছর ধরে বন্দী ‘বুয়া নোই’ হল ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুখী’ গরিলা। অন্যদিকে, পাটা চিড়িয়াখানার মালিক, থাই প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রী ভারাউত সিলপা-আর্চাকে জানিয়েছেন যে তিনি মাত্র ৩০ মিলিয়ন থাই বাট (ভারতীয় মূল্য প্রায় ৬ কোটি)-এর বিনিময়ে ওই গরিলাকে ছেড়ে দেবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ সচিবের মন্ত্রী থানেটপোল থানাবুনিয়াওয়াত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বুয়া নোই’-এর মুক্তির জন্য সরকার দাতব্য তহবিল সংগ্রহের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু এখনও অবধি ‘বুয়া নোই’-এর মুক্তিপণ জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা আগেও বুয়া নোইয়ের মুক্তির জন্য প্রচার চালিয়েছি এবং তহবিল সংগ্রহ করেছি। কিন্তু সমস্যা হল, তখনও চিড়িয়াখানার মালিক বুয়া নোইকে বিক্রি করতে অস্বীকার করে। আবার যখন সে তাকে মুক্তি দিতে রাজি হয় তখন দাম অনেক বেশি।”
‘বুয়া নোই’ ওই চিড়িয়াখানার মালিকের কাছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৯০ সালে যখন ওই গরিলার মাত্র ১ বছর বয়স ছিল, চিড়িয়াখানার মালিখ তাকে জার্মানি থেকে ৩ মিলিয়ন থাই মূল্যের বিনিময়ে কিনেছিলেন। প্রায় ৩৩ বছর ধরে ওই গরিলা খাঁচায় বন্দী। আর এত বছর পর তার মুক্তিপণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।