Narco Test: নারকো টেস্ট কী? অভিযুক্ত টেস্ট করাতে না চাইলে কোন উপায়ে তা করা সম্ভব?

Narco Test: এই পদ্ধতিতে প্রথমে যার নারকো টেস্ট করা হচ্ছে তাঁকে এক ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। যাকে পোশাকি ভাষায় ট্রুথ সেরাম বলা হয়। এই ওষুধ দিলে আস্তে আস্তে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে অভিযুক্ত। কিন্তু সম্পূর্ণ ঘুম আসে না বা অবচেতন হয়ে পড়ে না।

Narco Test: নারকো টেস্ট কী? অভিযুক্ত টেস্ট করাতে না চাইলে কোন উপায়ে তা করা সম্ভব?
অভিযুক্ত না চাইলেও নারকো টেস্ট করানো সম্ভব?
Follow Us:
| Updated on: Sep 14, 2024 | 12:50 PM

নারকো অ্যানালিসিস বা নারকো টেস্ট। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে আবার এই শব্দবন্ধ ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। অপরাধী মিথ্যে বললে তার পেট থেকে সত্যিটা টেনে বের করে আনতে নানা বিধ যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে একটি হল এই নারকো টেস্ট।

ইরফান খানের ‘তলোয়াড়’ সিনেমাটি মনে আছে? আরুশি তলোয়াড় খুনের ঘটনায় আধারিত সেই ছবিটি। সেখানেও অপরাধীর নারকো টেস্ট করা হয়েছিল। এ ছাড়াও বহু সিনেমা বা সিরিজে নারকো টেস্টের উল্লেখ পাওয়া যায়।

বাস্তবে কী এই নারকো টেস্ট?

এই খবরটিও পড়ুন

কোনও অপরাধ সংগঠিত হলে, অভিযুক্ত সেই অপরাধ সম্পর্কে সত্যি কথা বলছে না মিথ্যে কথা বলছে নাকি কোনও সত্য গোপনের চেষ্টা করছে তা বুঝতেই এই টেস্ট করা হয়। পুলিশ অথবা তদন্তকারী সংস্থা আদালত এবং অভিযুক্তের থেকে অনুমতি নিয়ে তবেই এই টেস্ট করাতে পারে।

কী ভাবে করা হয় নারকো টেস্ট?

এই পদ্ধতিতে প্রথমে যার নারকো টেস্ট করা হচ্ছে তাঁকে এক ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। যাকে পোশাকি ভাষায় ট্রুথ সেরাম বলা হয়। এই ওষুধ দিলে আস্তে আস্তে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে অভিযুক্ত। কিন্তু সম্পূর্ণ ঘুম আসে না বা অবচেতন হয়ে পড়ে না। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কের পক্ষে যতটা তীক্ষ্ণ কাজ করা সম্ভব, এই অবস্থায় কিন্তু তা সম্ভব নয়।

ঠিক এই অর্ধচেতন অবস্থায় অভিযুক্তকে একের পর এক প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্ন অপরাধ সংক্রান্ত হতে পারে, আবার তা ছাড়া অনান্য বিষয় নিয়েও হতে পারে। এমনকি একই প্রশ্ন নানা ভাবে ঘুরিয়ে করা হয়,শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি সত্য বলছে কিনা তা বোঝার জন্য।

টেস্টের সময় অভিযুক্তের হার্ট, পালস, মস্তিষ্ক কী ভাবে সাড়া দিচ্ছে, কোনও রকম উত্তেজনা আছে কিনা এই সব কিছুর গ্রাফিক্যাল রেকর্ড করে রাখা হয়। শেষে সেই রেকর্ড, যিনি প্রধানত এই টেস্টটি করলেন অর্থাৎ মনোবিদ বা (সাইকোঅ্যানালিস্ট) সেই রিপোর্টকে বিশ্লেষণ করে দেখেন অভিযুক্ত আদৌ সত্যি কথা বলছে, মিথ্যে কথা বলছে নাকি কোনও সত্যি গোপনের চেষ্টা করছে।

তবে মনে রাখবেন ওষুধ দেওয়ার কিন্তু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। একবারেই পুরো ওষুধ দিয়ে দেওয়া হয় না। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে একটু একটু করে সেই ড্রাগ অভিযুক্তের শরীরে দেওয়া হয়। অনেক সময় একটু ড্রাগ দিয়ে আবার খানিকটা রক্ত বার করে নেওয়া হয়। আবার খানিকটা ড্রাগ ইঞ্জেক্ট করা হয়। এতেই আছন্ন হয়ে পড়ে অভিযুক্ত। অল্প অল্প করে ওষুধ দেওয়ার আরেকটি বড় কারণ হল সোডিয়াম পেনথালন বা অন্য যে সব ড্রাগ ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে অভিযুক্তের কোনও অ্যালার্জি আছে কিনা তাও দেখে নেওয়া যায়।

সত্য অন্বেষণের ক্ষেত্রে কতটা ভরসাযোগ্য এই নারকো টেস্ট?

এই বিষয়ে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্ত বলেন, “আমেরিকার যেসব সাইকোলজিক্যাল সেন্টারে এই টেস্ট হয় বা যাঁরা এই টেস্ট করেন তাঁদের দাবি ঠিক মতো যদি এই টেস্ট করা যায় তাহলে প্রায় ৬০ শতাংশ বা তার বেশি ক্ষেত্রেই সাফল্য মেলে। আবার ভারতের সাইকোলজিস্টদেরও দাবি এই পদ্ধতিতে সত্যি অন্বেষণ করা সম্ভব।”

কারা করেন এই টেস্ট?

এই টেস্টের সঙ্গে যে মানসিক স্বাস্থ্যের একটি বিশেষ যোগ রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। মনরোগ বিশ্লেষকের ছাড়া এই টেস্ট করা অসম্ভব। মনরোগ চিকিৎসক বা সাইকোলজিস্ট, ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিশেষজ্ঞরাই এই টেস্ট মূলত করেন।

আরও যা জানা দরকার –

তবে মনে রাখবেন এক্ষেত্রে এই টেস্ট করতে গিয়ে ওষুধ দিতে ভুল হলে কিন্তু অভিযুক্তের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই টেস্ট করানোর আগে আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে অভিযুক্তের অনুমতি নিয়ে তবেই এই টেস্ট করা সম্ভব। এই সম্পর্কে অজয়বাবু বলেন, “আদালতের ভাষায় ‘ফ্রি, ফেয়ার অ্যাণ্ড ভলেন্টিইয়ারি কনসেন্ট’ চাই। অর্থাৎ কোনও চাপ ছাড়াই অভিযুক্তকে নিজের ইচ্ছায় মত দিতে হবে। তবেই এই টেস্ট করানো সম্ভব।”

তবে অজয়বাবু বলেন, “এই টেস্ট করাতে যদি অভিযক্ত না চায় তার মানে, আদালতের চোখে অভিযুক্ত কিছু একটা বিষয় গোপন করতে চাইছে ধরে নেওয়া হয়। তখন আদালত এই টেস্ট করানোর জন্য অভিযুক্তকে অনুরোধ করতে পারে।”

আইন কী বলছে?

আইনে মতে এই টেস্ট করতে হলে প্রথমে তদন্তকারী সংস্থাকে আদালতে আবেদন জানাতে হবে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলে অভিযুক্ত যাঁর এই টেস্ট করাতে হবে তাঁর অনুমতি নিতে হবে। তিনি যদি মত না দেন তাহলে এই টেস্ট করা সম্ভব নয়।

এই বিষয়ে আইনজীবি কল্লোল মণ্ডল বলেন, “অভিযুক্ত নারকো টেস্ট করাতে না চাইলে আর কোনও ভাবেই তা করানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আর্টিকেল ২১ অবমাননা হতে পারে। আসলে এই টেস্ট করাতে যে ড্রাগ দিতে হয় তাতে তাঁর নানা ক্ষতি হতে পারে। তাই সে নিজে না চাইলে এই টেস্ট করা সম্ভব নয়। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়। এমনকি আদালতও এই ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে বাধ্য করতে পারে না।”

নারকো টেস্ট করার সময় অভিযুক্তের তরফে আর কেউ থাকতে পারেন?

তবে টেস্ট করাতে চাইলে অভিযুক্ত অনেক সময় তাঁর আইনজীবি বা অন্য কাউকে সেই সময়ে উপস্থিত রাখার আর্জি জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে তদন্তকারী আধিকারিকের মত জেনে আদালত নির্ধারণ করে সেই অনুমতি দেওয়া হবে কি না!

আদালতে এই টেস্টের রিপোর্টকে মান্যতা দেওয়া হয়?

এই বিষয়ে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্ত বলেন, “আদালতের নির্দেশেই এই টেস্ট হয়। সেই টেস্ট কতটা সফল হয়েছে তার রিপোর্ট দেখে বিশ্লেষণ করে আদালতই ঠিক করবে তা রিপোর্ট কতটা গ্রাহ্য করা যাবে।”

আবার বিশিষ্ট আইনজীবি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য টিভি৯ বাংলাকে বলেন, “নারকো টেস্ট একমাত্র প্রমাণ নয়। তার সঙ্গে অনান্য তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন। সেই সব তথ্যপ্রমাণের সঙ্গে এই রিপোর্ট একটি অতিরিক্ত প্রমাণ বা এভিডেন্স হিসাবে বিবেচনা করা হবে। এই সব তথ্যদি নিয়ে যদি সম্মিলিত ভাবে একটি মালা গাঁথা যায় তার মধ্যে দিয়েই খুঁজে পাওয়া সম্ভব কে অপরাধ করেছে এবং কেন করেছে!”