সায়ম কৃষ্ণ দেব
Dec 22, 2024 | 1:21 PM
বিশ্বের ইতিহাসে এমন ভয়ানক ভূমিকম্প বোধহয় আর হয়নি। তার ভয়াবহতা আর তীব্রতা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে তা এখনও অবধি ঘটে যাওয়া সবভেয়ে ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ভাবুন তো, এক ভূমিকম্পেই যদি চলে যায় প্রায় ১০ লক্ষ প্রাণ, বিষয়টা কতটা সাঙ্ঘাতিক!
সময়টা ১৫৫৬ সাল। তখন গোটা বিশ্বের জনসংখ্যা আজকের মোট জন সংখ্যার প্রায় ৪০ কোটি আশেপাশে। যা আজকের জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ মতো। সেই সময় এক চিনে এক ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের।
তৎকালীন চিনের শানসি প্রদেশে ঘটে এই মর্মান্তিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অনুমান করা হয় তখন যদি রিখটার স্কেল থাকত, তা হলে ভূমিকম্পের মাত্রা হত ৮। চিনের ইতিহাসে এই রকম বিধ্বংসী ভূমিকম্প আর হয়েছে বলে জানা যায় না। মনে করা হয় ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি সকালে হয় এই ভূমিকম্প।
জানা যায় কেবল ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ মানুষের। পরে নানা ভাবে চাঙর চাপা পড়ে বা অনান্য কারণে মৃত্যু প্রায় ৭ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের। কেবল ভূমিকম্পের ফলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নয়। এই বিপর্যয়ের ফল ছিল দীর্ঘমেয়াদী।
সেই সময় অনেকেই শানসি প্রদেশে গুহায় বসবাস করতেন। পাথর চাপা পড়ে মৃত্যু হয় সেই রকম বহু মানুষের। এছাড়াও শানসি শহরের পুরো পরিকাঠামোই ভেঙে পড়ে। এই ভূমিকম্পের ব্যাপ্তি এতই বিশাল ছিল যে, তা দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রোগবালাই ছড়িয়ে পড়া, সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে।
বিপর্যয়ের মাপকাঠি বিবেচনা করে, এটি এখনও বিশ্বের ইতিহাসে প্রকৃতির শক্তি এবং মানব জীবনের ভঙ্গুরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভূমিকম্পের স্মৃতি। আজকের জনসংখ্যার আকারের সঙ্গে তুলনা করলে শানসি ভূমিকম্পের বিপর্যয়কর সংখ্যা অকল্পনীয়।
জানা যায়, সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল উত্তর- পশ্চিম চিনের শানসি প্রদেশ। মিং রাজবংশের জিয়াজিং সম্রাটের শাসন কালে ঘটে এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। তাই এই ভূমিকম্প জিয়াজিং ভূমিকম্প নামেও পরিচিত।
এই ভূমিকম্পের পরেই চিনে ভৌগোলিক দিক থেকেও নানা পরিবর্তন আসে। মাটি ফেটে জল বেরিয়ে আসে বেশ কিছু জায়গা থেকে। বহু বাড়ি-ঘর মিশে যায় মাটিতে। এমনকি সমভূমি ভাঁজ হয়ে পাহাড়র সৃষ্টি হয়েছে। ইয়েলো আর ওয়েই নদীও প্লাবিত হয়। ভাসিয়ে দেয় দু'কুল। তবে আজও এই ভূমিকম্পের ইতিহাসে সব চেয়ে ভয়ানক অংশ মৃতের সংখ্যা। কেবল একটি ভূমিকম্পে ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমন ইতিহাস আর খুঁজে পাওয়া যায় না। (সব ছবি - প্রতীকী। সূত্র - Getty Images)