
পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে চলছে নাটকীয় রূপান্তর। আমি-আপনি হয়তো উপরে বসে তা বুঝতেও পারছি না। কিন্তু রোজ একটু একটু করে সরে যাচ্ছে পায়ের তলায় মাটি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

এই ঘটনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে আফ্রিকা এবং সেখানকার বাসিন্দারা। পূর্ব আফ্রিকান রিফ্টে, হাজার হাজার কিলোমিটার প্রসারিত একটি বিশাল ফাটল দেখা গিয়েছে। যা আফ্রিকাকে দুটি ভাগে ভাগ করে দিচ্ছে। দুটি দিকে সরে যাচ্ছে টেকটনিক প্লেট। ফলে পৃথিবীর মানচিত্রও বদলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

ভূ-বিজ্ঞানীদের দাবি নতুন মহাসাগর জন্ম নিতে পারে এই প্রক্রিয়ার ফলে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হল, এই ভূ-ভাগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ার গতি। যা দেখে রীতিমত চমকে যাচ্ছেন ভূ-বিজ্ঞানীরাও। প্রাথমিক অনুমান ছিল এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে প্রায় কয়েক মিলিয়ন বছর। কিন্তু বর্তমানে যে গতিতে ঘটনাটি ঘটছে তাতে তার থেকে অনেক আগেই বদলে যাবে পৃথিবীর মানচিত্র বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে মাত্র ১ মিলিয়ন বছরের মধ্যে বা তার আগেই তৈরি হবে নতুন মহাসাগর। এই আবিষ্কারটি কেবল একটি ভূতাত্ত্বিক বিস্ময় নয় বরং গতিশীল শক্তিগুলির একটি আভাস যা ক্রমাগত পৃথিবীর পুনর্নির্মাণকে নির্দেশ করে।

পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট পৃথিবীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টেকটোনিক প্লেটগুলির মধ্যে একটি। উত্তরে লোহিত সাগর থেকে দক্ষিণে মোজাম্বিক পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত এই প্লেট। বিশাল ফাটল আফ্রিকান প্লেট এবং সোমালি প্লেটের মধ্যে সীমানাকেও চিহ্নিত করে, দুটি টেকটোনিক প্লেট যা প্রতি বছর প্রায় ০.৮ সেন্টিমিটার হারে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ।

২০০৫ সালে , ফাটলের গতিশীল কার্যকলাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই সময় কয়েক দিনের মধ্যে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে ৪২০ টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পের কারণে ৬০-কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে দীর্ঘ ফাটল দেখা যায়, যা কোথাও কোথাও ১০ মিটার পর্যন্ত গভীর ছিল। এই ধরনের ঘটনা বিরল বলেই জানান ভূ-বিজ্ঞানীরা।

ভূতাত্ত্বিক শক্তিগুলি যে অবিশ্বাস্য গতিতে কাজ করতে পারে তাও বোঝা যায় সেই সময়েই। ফাটলটি প্রসারিত হতে থাকলে, আফ্রিকার ল্যান্ডস্কেপে বড় পরিবর্তন আসবে। জাম্বিয়া এবং উগান্ডার মতো বর্তমানে ল্যান্ডলকড দেশগুলি অবশেষে উপকূলরেখা লাভ করতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য রুটেও পরিবর্তন আসবে। নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হতে পারে। শিপিং এবং পর্যটনের মতো শিল্পের দরজা খুলে যেতে পারে।

এই রূপান্তর যে পরিবেশগত পরিবর্তন আনবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরাও গভীরভাবে সচেতন। নবগঠিত সমুদ্রে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে। জীব বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করবে। নতুন ইকোসিস্টেম তৈরি করবে। বিজ্ঞানীদের মতে লক্ষ লক্ষ বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগর গঠনের সময় একই ঘটনা ঘটেছিল।