Rath Yatra 2022: বিশ্বের বৃহত্তম ও অলৌকিক জায়গা জগন্নাথের রান্নাঘর, ৭৫২টি কাঠের উনুনে তৈরি হয় পুরীর মহাপ্রসাদ!
TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপ্তা দাস
Jul 09, 2022 | 6:52 PM
Mahaprashad: আজ থেকে প্রায় ৮০০ বছর আগে তৈরি হয় উৎকলের শ্রী জগন্নাথ মন্দির। কিন্তু জানেন কী চারধামের এক ধাম পুরীর জগন্নাথ মন্দির শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রতিদিন স্বদেশীয়ানার সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
1 / 9
পুরীর জগন্নাথ মন্দির হিন্দু তীর্থের মধ্যে শুধুই যে অন্যতম না নয়। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বহু ইতিহাস। পুরীর মহাপ্রসাদের এমনই গুণ যে, কোনও দিন সেখানে প্রসাদ বাড়তিও হয় না, আবার নষ্টও হয় না। এখানে কোনও পুরাতন পাত্রে রান্না করা হয় না, প্রতিদিন নতুন নতুন পাত্রে রান্না করা হয়, তাই একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়, আরেক দল তা সরবরাহ করে রান্নাঘরে নিয়ে যায় ।
2 / 9
বছরের ৩৬৫ দিন জগন্নাথ মন্দিরের পিছনে এই রান্নাঘরেই তৈরি হয় মহাপ্রসাদ। একে রোষা ঘর বলে। যেখানে সাধারণ ভক্তের কোবও প্রবেশে অনুমতি নেই। রোষা ঘর রয়েছে ৭৫২টি উনুন। পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে ব্যবহৃত হয় না কোনও প্রকারের ধাতব বাসনপত্র। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রতিদিন পালিত হওয়া স্বদেশিয়ানার এমন উজ্জ্বল নিদর্শন ভূ-ভারতে মেলা কঠিন।
3 / 9
রন্ধন শালার আগুন কোনও সময়ের জন্য নির্বাপিত হয় না। সেই অনির্বাণ অগ্নিশিখায় নতুন মাটির পাত্রে প্রতিদিন সমপরিমাণ ভোগ রান্না করা হয় মন্দির সংলগ্ন রন্ধন শালায়। কাঠের আগুনে একটির ওপর আর একটি জলপূর্ণ হাঁড়ি বসিয়ে একদম ওপরের হাঁড়িতে রান্না চাপানো হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর নামানো হয় ভোগ। রান্না চলা কালীন কোনও রকম পরীক্ষা করা হয় না। মন্দিরে যারা রান্নার দায়িত্বে তাঁরা স্নান করে ‘রোষাহোম’ নামক একটি পূজা করে রান্না শুরু করেন। রন্ধন শালার কাজ যারা করেন তাঁরা কোনও সুগন্ধি বা তাম্বুল অর্থাৎ পান খেতে পারেন না।
4 / 9
দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পায় । আর এমনিতে পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রসাদ পেয়ে থাকে। এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত। ৭৫২টি মাটির তৈরি উনুন যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরেও বেশি। রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার সেবক। তার মধ্যে ৫০০ সেবক রয়েছে কেবলমাত্র চুলাতে রান্না করার জন্য সহায়ককারী হিসেবে।
5 / 9
প্রতিদিন ১০০টির উপর আইটেম রান্না করা হয় যা দুটি ভাগে বিভক্ত। এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয়। পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলো যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরি এবং সমস্ত রকমের সবজি। অপরদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কুট, মিষ্টান্ন আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা। বাইরে থেকে আনা কোন খাবারই জগন্নাথ দেবকে দেওয়া যায় না। নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা জিনিস রান্নাঘরে রান্না করে মহাপ্রভুকে দেওয়া হয়।
6 / 9
আরও একটি অলৌকিক বিষয় রয়েছে এই রান্না ঘরে। লোকমুখে শোনা যায়, গঙ্গা আর সরস্বতী নদী একই সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছে এই রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে। তবে তা বাইরে থেকে দেখা যায় না। এই দুই নদীর জল দিয়েই রান্না হয়। বিশালাকার রান্নাঘরে কেউ কেউ সব্জি ধুয়ে রাখেন, আবার কেউ কেউ সব্জি কাটেন, আবার কেউ মশলা তৈরি করেন । রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকেন তাদের বয়স যখন ১২ বছর হয়, তখন থেকে তারা ট্রেনিং এ নেমে পড়েন। এভাবে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবা সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকেন।
7 / 9
জগন্নাথ দেব আর লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় ধন্য এই রান্না ঘর। তাইতো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৬ রকম ভোগ রান্না করা হয়। আসলে সমস্ত ভোগই গরিব, নিরন্ন মানুষ এবং ভক্তদের মাঝে বিলি করা হয়। এজন্য বলা হয়ে থাকে, জগন্নাথ দেব নিজে যেমন খেতে ভালোবাসেন, তেমনি ভালোবাসেন ভক্ত-ভক্তদের খাওয়াতে। খরচেও কার্পণ্য করেন না। তাই রোজ খাওয়া খরচ এর জন্য ২ লাখ এর ওপর। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে খরচা হয় লাগাম ছাড়া।
8 / 9
জগন্নাথের ভোগে মূলত দুই রকমের ভোগ নিবেদন করা হয়। ভাত, ডাল, তরকারি, খিচুড়ি জাতীয় রান্না করা খাবারকে শঙ্খুড়ি বলা হয়। আর খাজা, গজা, খই, মুড়কি জাতীয় শুকনো খাবারকে শুখুলি বলা হয়। এ ছাড়া থাকে নানা রকমের খিচুড়ি। এর সঙ্গে থাকে মিষ্টি। বলরামের বিশেষ ভোগে থাকে ক্ষীর এবং মালপোয়া।
9 / 9
ফুটন্ত জলে সবজি এবং মশলা দিয়ে তৈরি করা হয় মহাপ্রভুর রান্না। তবে, পেঁপে, আলু, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করা হয় না। মূলত দেশীয় সবজি যেমন রাঙ্গাআলু, পটল, কাঁচকলা, কাঁকরোল থাকে। তবে রথের দিন জগন্নাথের ভোগে থাকে বিশেষ ৫৬টি পদ।