সায়ম কৃষ্ণ দেব
Aug 19, 2024 | 2:52 PM
আজ রাখী পূর্ণিমা, ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় বোনেরা মঙ্গল সুতো পরিয়ে দেয় তাঁর ভাইয়ের হাতে। ভাই-বোনের অটুট সম্পর্কের প্রতীক এই উৎসব।
এদিন সারা ভারতেই হিন্দুরা মেতে ওঠে এই উৎসবে। তবে আপনি কি জানেন, যে রাখী কিন্তু কেবল বোনেরা ভাইকেই পরায় না। স্বামীর মঙ্গল কামনায় তাঁর হাতে স্ত্রীদেরও রাখী বেঁধে দেওয়ার উল্লেখ আছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাও সত্যি! রইল রাখী নিয়ে তেমনই অজনা সব তথ্য।
কেবল বোনেরা ভাইয়ের হাতেই রাখী বাঁধবে এমন নয়। বরং ভারতের রাজস্থানে প্রচলিত রয়েছে এক অন্য রাখী উৎসব। আপনি যদি মহিলা হন, আপনার যদি দাদা থাকে এবং তিনি যদি বিবাহিত হন, তা হলে বৌদিকেও রাখী পরিয়ে পালন করা হয় রাখী পূর্ণিমার। একে 'লুম্বা রাখী' বলে। রাজস্থানী শব্দ 'লুম্বা' কথার অর্থ হল 'চুড়ি'। নারী শক্তিকে উদযাপন করতেই এই প্রথা বলে প্রচলিত।
মহারাষ্ট্রে এই রাখী পূর্ণিমা 'নারিয়াল পূর্ণিমা' নামেও পরিচিত। শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে এই পূর্ণিমা তিথিতে সমুদ্র উপকূলবর্তী মহারাষ্ট্রে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। এই দিন সমুদ্রে নারকেল অর্পণ করে এখানকার মানুষ ভগবান বিষ্ণুর প্রার্থনা করেন।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, একবার দেবরাজ ইন্দ্র রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। তখন ইন্দ্রের মঙ্গল কামনায় তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী দেবরাজের হাতের কব্জিতে একটি সুতো বেঁধে দিয়ে ছিলেন। এই দিনটি ছিল রাখী পূর্ণিমা।
আরেক পৌরাণিক মতে ভগবান বিষ্ণুকে নিজের তপস্যা দ্বারা সন্তুষ্ট করেন রাজা বলি। তখন ভগবান বিষ্ণু বর হিসাবে রাজা বলির প্রাসাদে থাকার বচন দেন। তবে দেবী লক্ষ্মীর এই সিদ্ধান্ত পছন্দ ছিল না। তখন তিনি রাজা বলির হাতে রাখী পরিয়ে, উপহার হিসাবে ভগবান বিষ্ণুকে সেই বচন মুক্ত করেন।
আবার মহাভারতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত একবার যশোদা পুত্র কৃষ্ণের হাত কেটে গেলে নিজের শাড়ি থেকে কাপড় ছিঁড়ে তাঁর হাতে বেঁধে দেন দ্রৌপদী। প্রতিদানে যেকোনও দিন যে কোনও পরিস্থিতিতে দ্রৌপদীকে রক্ষা করার বচন দেন কৃষ্ণ। এরপর ভরা রাজসভায় পাশা খেলায় জিতে যখন দুর্যোধন বাহিনী দ্রৌপদীর সম্মান, লজ্জা এবং বস্ত্র হরণে উদ্দত হয়েছিল তখন তাঁকে রক্ষা করেন স্বয়ং কৃষ্ণ।
আবার ভারতের ইতিহাসেও এই রাখী বন্ধনের নির্দশন মেলে। ৩২৬ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। তখন কটোচ রাজ্যের রাজা ছিলেন পুরু। আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা স্বামীর সুরক্ষার কথা ভেবে রাজাকে পুরুকে একটি রাখী বা পবিত্র সুতো পাঠান। সেই রাখী গ্রহণ করেন রাজা পুরু, এবং তাঁর সম্মান রক্ষার্থে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আলেকজান্ডারকে আক্রমণ করেননি তিনি।