শক্তির আরাধ্য দেবী কালীর উগ্র ও ভয়ংকর রূপ সৃষ্টির পেছনে আছে পৌরাণিক কারণ। পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী ,গ্রহ কালী, চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তা প্রভৃতি। মহাকাল সংহিতা অনুসারে মা কালীর আবার নব রূপের পরিচয় পাওয়া যায়।
কালী পূজার সময়কাল দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যাতে দীপান্বিতা কালী পূজা করা হয়। এছাড়াও মাঘ মাসে রটন্তি কালীপূজা এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজা ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত করা হয়। প্রতি অমাবস্যায় এছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ অমাবস্যায় এছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ পিঠে প্রতিদিন এবং প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মা কালী পূজার প্রচলন দেখা যায়।
আগেকার দিনে, দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পশু রক্ত বা পশু বলি করে উত্সর্গ করা হয়। এছাড়াও প্রসাদ হিসেবে লুচি এবং নানা ফল ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। কালী পুজোয় বলি ছাড়া অন্য মাংস ছিল বৃথা মাংস। তবে বর্তমানে বলিপ্রথা বন্ধ হলেও, বাংলার বিভিন্ন মন্দিরে এখনও ভোগ হিসেবে কালীকে আমিষ খাবার দেওয়া হয়।
কালীঘাট, কলকাতা- দেশের ৫১ টি শক্তিপীঠ রয়েছে। তার মধ্য়ে ২০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে প্রতিদিন আগে পশুবলি দেওয়া হত। এই মন্দিরের দেবীকে রান্না করা মাংস প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে নিবেদন করা হয়। এই মন্দিরে দেবীকে নিরামিষ ভোগ যেমন প্রদান করা হয়, তেমন আমিষ ভোগও দেওয়া হয়ে থাকে।
দক্ষিণেশ্বর: দক্ষিণেশ্বরের মন্দির সারা ভারত বিখ্যাত। শ্রীরামকৃষ্ণের এই মন্দিরে দেবীকে প্রতিদিন ভোগ হিসেবে মাছ নিবেদন করা হয়। তবে এখানে কোনও পশুকে বলি দেওয়া হয়নি।
তারাপীঠ, বীরভূম: তন্ত্র অনুসারে এই শক্তিপীঠে কালীকে একদিকে যেমন নিরামিষ খাবার ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়, তেমন মাছ ও মদও দেওয়া হয়। আসলে করণ সুধা বা মদ হল ভোগ হিসেবে আবশ্যক। মনোবাঞ্ছা পূরণের পরে দেবীকে উত্সর্গ করার সময় এই বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। তন্ত্রসাধনায় মদ ও মাংস দেওয়ার রীতি আছে। শুধুমাত্র যারা তান্ত্রিক দর্শনে এই ধরনের অনুশীলনে রপ্ত তারাই উত্তর দিতে পারেন কেন এই চর্চা চলে আসছে।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, কলকাতা- উত্তর কলকাতার ৩০০ বছরের পুরনো ঠনঠনিয়া কালী মন্দিরে মাছ ছাড়া ভোগ সম্পূর্ণ হয় না। প্রতি পূর্ণিমায় পশুবলি দেওয়ার রীতি ছিল। তবে এখন আর বলি দেওয়া হয় না।