
শ্রাবণ মাসের প্রতিপদ তি্থি থেকে আরম্ভ করে পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত পাঁচদিন পর এই ঝুলন উত্সব পালন করা হয়ে থাকে। রাখী পূর্ণিমার মাধ্যমে ঝুলন যাত্রার সমাপ্তি ঘটে। বাংলার গ্রামেগঞ্জে শুধু নয়, শহরাঞ্চলেও ঘটে বৈষ্ণবদের শ্রেষ্ঠ এই উত্সব।

বাংলাতে তো হয়ই, মথুরা ও বৃন্দাবনে এই উত্সব ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। ঝুলন শব্দটির সঙ্গে দোলনার অনেক মিল রয়েছে। এদিন রাধাকৃষ্ণকে একসঙ্গে বসিয়ে, সুন্দর করে সাজিয়ে দোলনাতে বসিয়ে পুজো করা হয়।

শাস্ত্রমতে, শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমকে সম্মান দিতে এই উত্সব পালন করা হয়। সখী ও রাধাকে নিয়ে যে লীলা করতেন শ্রীকৃষ্ণ, তারই কৃত্রিম রূপ দিতে রাধাকৃষ্ণকে নিয়ে কীর্তন ও আনন্দ করা হয়। সঙ্গে চলে কৃষ্ণভক্তদের মধ্যে নাচ ও গান।

শাস্ত্র বিশারদদের মতে, দ্বাপরযুগ থেকেই এই উত্সবের উত্স। বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে এই উত্সব পালন করা হয়। কৃষ্ণভক্তদের কাছে দোলউত্সব যেমন খুব কাছের, তেমনি ঝুলন উত্সবও বেশ প্রিয়।

ঝুলন উত্সবকে কেন্দ্র করে গ্রামবাংলায় রয়েছে প্রচুর সাবেক প্রথা ও রীতি। রয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাত্পর্য। এদিন নানাধরনের মাটির ও প্লাস্টিকের পুতুল, কাঠের দোলনা ও গাছপালা, পুকুর দিয়ে ঝুলন সাজানোর প্রথা রয়েছে।

এদিন ঝুলন উপলক্ষে কোথাও কোথাও নামসংকীর্তন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ রকমের ফলের নৈবেদ্য, লুচি, সুজি নিবেদন করা হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ যাত্রার মধ্যে রয়েছে এই ঝুলন যাত্রা। এছাড়া রথযাত্রা, রাসযাত্রা, স্নানযাত্রা, দোলযাত্রাও পড়ে।

প্রথা অনুযায়ী, ঝুলন যাত্রায় রাধা-গোবিন্দের যুগনবিগ্রহকে পূর্ব-পশ্চিম দিকে দোলনায় রাখা হয়। দোলনা দোলানোর সময় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে দোল দেওয়া হয়। সূর্যের উদয় ও অস্তের সঙ্গে সঙ্গে দিক নির্দিষ্ট করে পুজো করা হয়।

এদিন ঠাকুরের আসন সুন্দর করে সাজানো উচিত। যদি চন্দন কাঠ রাখলে বাড়ির অশুভ শক্তি দূর করে শুভশক্তি প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, বাড়িতে এদিন বীণা কিনলেও পজিটিভিটি বজায় থাকে। এদিন হলুদ রঙের ফুল, ফল ও মিষ্টি নিবেদন করলে তা শুভ হয়।