দিনরাতের খাটনি শেষে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, পরিবারের সুরক্ষায় বাড়তি কিছু সঞ্চয় করতে চান প্রায় সকলেই। সুরক্ষিত অবসর জীবনের কথা ভেবেও চাকরিরত অবস্থাতেই বিনিয়োগের পথে হাঁটেন অনেকেই। কিন্তু, কোথায় বিনিয়োগ করলে পাওয়া যেতে পারে বড় লাভ? ভাল সুদে মিলতে পারে বড় রিটার্ন? মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) নাকি এনপিএস (NPS)? বিনিয়োগের এই দ্বন্দ্বে দিশাহীন হয়ে পড়েন অনেকেই।
এনপিএস কী?
ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (National Pension Scheme) বা এনপিএস হল একটি সরকারি উদ্যোগ। সাধারণভাবে, এই স্কিমের মাধ্যমে যে কোনও সেক্টরের কর্মীরা অ্যাকাউন্ট খুলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেকারিং ডিপোজিট করতে পারেন। অবসরকালীন সময়ে বিনিয়োগকৃত অর্থের আংশিক তুলতে পারবেন। উল্লেখ্য, সরকারি উদ্যোগ হওয়ায় এই স্কিমে (Scheme) ঝুঁকির পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। সুতরাং, বিনিয়োগকৃত (Invested) অর্থ বছরের পর বছর নিরাপদ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে দীর্ঘমেয়াদের (Long Term) ক্ষেত্রে আদর্শ একটি বিনিয়োগ মাধ্যম এই এনপিএস।
মিউচুয়াল ফান্ড কী?
মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্বল্পমেয়াদি দুই প্রকারের হতে পারে। বিনিয়োগকারী ঠিক কতটা সময় পর্যন্ত তার পুঁজি বিনিয়োগ করতে চান তার উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন রকমের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে বাজারে। সাধারণভাবে, মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন পেশাদার ফান্ড ম্যানেজাররা। তবে এই বিনিয়োগে খানিক ঝুঁকি থাকলেও লাভের অঙ্কটাও হয় বেশি। বিনিয়োগ করা অর্থ যে কোনও সময় তুলে নিতে পারেন বিনিয়োগকারী। ইএলএসএস (ELSS) ছাড়া কোনও খাতেই লক-ইন পিরিয়ড নেই বললেই চলে।
তাহলে বাছবেন কোনটা?
কিন্তু এই নানা সুবিধা-অসুবিধার মাঝে প্রশ্ন একটিই এনপিএস নাকি মিউচুয়াল ফান্ড, কোনটা ভাল? কোথায় করা যেতে পারে বিনিয়োগ? এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মত, যদি করের (Tax) দিক থেকে লক্ষ্য করা হয়, তবে দেখা যাবে, উভয় মাধ্যমেই কর সংক্রান্ত সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু, এনপিএসের তুলনায় ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডগুলির কর সংক্রান্ত সুবিধা অনেকটা কম। অন্যদিকে, এনপিএস অ্যাকাউন্টধারীদের টাকা তোলার ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ কাজ করে থাকে। যতদিন না পর্যন্ত বিনিয়োগ ১০ বছর পূরণ হচ্ছে কিংবা, বিনিয়োগকারীর বয়স ৬০ না হচ্ছে, ততদিন বিনিয়োগকরা অর্থ দাবির ক্ষেত্রে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। এদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে প্রবেশ করা কিংবা বেরিয়ে আসার বিষয়টি অনেকটা নমনীয়। যে কোনও সময়েই বিনিয়োগকারী টাকা ঢালতে বা তুলে নিতে পারেন।
মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিনিয়োগ মাত্র ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, একজন ব্যাক্তি মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ শুরু করতে পারবেন। সেই তুলনায় ওই একই ব্যাক্তিকে ন্যাশনাল পেনশন স্কিমে বিনিয়োগ শুরু করতে গেলে ন্যূনতম মূল্য হিসাবে ১ হাজার টাকা দিতে হবে।
আবার, রিটার্নের প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, এনপিএসের বার্ষিক রিটার্ন প্রায় ৯ থেকে ১২ শতাংশ ধরে চলা যেতে পারে। এদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে বার্ষিক রিটার্ন সম্পূর্ণ শর্তসাপেক্ষ। ফান্ড বিশেষে নির্ভর করবে বার্ষিক কত রিটার্ন পেতে পারেন আপনি। শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনও ব্যাক্তি ১৫ বছর ধরে প্রতি মাসে মিউচুয়াল ফান্ডে ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন, সেক্ষেত্রে তার বার্ষিক রিটার্ন পৌঁছে যেতে পারে ১৫ শতাংশে।
বিঃ দ্রঃ – এটি একটি শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ সম্পর্কিত শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কখনই বিনিয়োগে উৎসাহিত করা বা মুনাফা কামানোর সহজ উপায় খুঁজে দেওয়া নয়। শেয়ার বাজারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানোই এই প্রতিবেদনের অন্যতম লক্ষ্য। উল্লেখ্য, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিুপূর্ণ।