পুরাণ মতে, আশ্বিনের শুক্লাপক্ষকে অপরপক্ষ বা পিতৃপক্ষ বলা হয়। তাই মহালয়াকেও অপরপক্ষ বলা হয়। এই কৃষ্ণপক্ষের অন্তরালেই লুকিয়ে রয়েছে এক অদম্য নারীশক্তির বিজয়গাথা। শাস্ত্রে তার উল্লেখ পাওয়া যায় বারবার। মহালয়ার কাকভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শোনা বাঙালির কাছে এক অন্যরকম নস্টালজিয়া। চণ্ডীপাঠ ও আগমনী গানের মাধ্যমে শক্তির আলয় বিশ্বজননীকে সাদরে আহ্বান জানানো হয়। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ বা পিণ্ডদান করা হয়। তাই এই দিনটিকে শুভ বলে মনে করা হয় না। তবুও দেবীর আগমনে গোটা আকাশ যেন নতুন উদ্যমে সাজতে থাকে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রাজা সূরথ বা বৈশ্য সমাধির পুজোকেই দুর্গাপুজো বলে মনে করা হয়। রামায়ণ, কৃত্তিবাস ওঝা বা ব্রহ্মবৈবর্ত অনুসারে দুর্গাপুজো সূচনা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। তবে সকলেই অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখতে, বিশ্বকল্যাণের উদ্দেশ্যেই দুর্গার বিশেষ আচার মেনে পুজো করতে শুরু করেছিলেন। ত্রিদেব ও অন্যান্য দেব-দেবীর ঐশ্বরিক শক্তি থেকে সৃষ্টি হয়েছিল দেবী দুর্গার। হিমালয় দিয়েছিলেন বাহন সিংহ। কোন কোন দেবতা দুর্গাকে কোন অস্ত্রে সাজিয়ে তুলেছিলেন। দশভুজার ১০ হাতে থাকে ১০ অস্ত্র। ত্রিশূল, খড়্গ, চক্রণ, ধনুক, বাণ, শক্তি, ঢাল, ঘণ্টা, নারপাশ, পরশু। মহাদেব দিয়েছিলেন ত্রিশূল, বিষ্ণুদেব দিয়েছিলেন চক্র, অগ্নিদেব দিয়েছিলেন শক্তি, ইন্দ্রদেব দিয়েছিলেন বজ্র, বায়ুদেবতা দিয়েছিলেন ধনু, ঐরাবত দিয়েছিলেন ঘণ্টা, যমরাজ দিয়েছিলেন কালদণ্ড, বরুণদেব দিয়েছিলেন পাশ, ব্রহ্মা দিয়েছিলেন অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, সূর্য়দেব দিয়েছিলেন রশ্মি, বিশ্বকর্মা দিয়েছিলেন পরশু।
পিতৃতর্পণের দিনেই দেবীর বিজয়গাথাকে নারীশক্তির অদম্য জয় বলে মনে করা হয়। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে উল্লেখ রয়েছে, অপমান, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার পাল্টা জবাব দিতেই নাকি দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করা হয়েছিল। যুদ্ধে আহ্বান শুনে মহিষাসুর প্রথম দেবীকে লালসার প্রতি ডাক দিয়ে তীব্র অপমান করেছিলেন। সেই অপমানের বদলা নিতেই দুর্গা ক্রোধে ও শক্তিতে অসুর বধ করেছিলেন। সেই শক্তিকেই পুজো করেন ভক্তরা।