৭ নভেম্বর চতুর্দর্শী এবং কার্তিক শুক্লপক্ষের সোমবার। ৭ নভেম্বর বিকেল ৪ টা ১৫ মিনিট অবধি চতুর্দর্শী তিথি থাকবে। এরপর শুরু হবে পূর্ণিমা তিথি। প্রকৃতপক্ষে, কার্তিক মাসের এই পূর্ণিমা থাকবে ২ দিন! পূর্ণিমা যখন ২ দিনের হয়, তখন প্রথম দিন পূর্ণিমার ব্রত পালন করা হয়। দ্বিতীয় দিনে স্নান ও দানের পূর্ণিমা পালিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যেহেতু ৭ নভেম্বর আকাশে চাঁদ পুরোপুরি উদিত হবে তাই সেদিনই পূর্ণিমার ব্রত পালন করা হবে। চলতি বছরে ৭ নভেম্বর দিনটিতে দেব দীপাবলিও উদযাপিত হবে। মূলত, দীপাবলির ১৫ দিন পরে দেব দীপাবলি পালিত হয়। কথিত আছে, দেব দীপাবলির দিনে দেবতারা পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের স্বাগত জানাতে পৃথিবীতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। শাস্ত্র অনুসারে এই দিন সন্ধ্যায় শিব মন্দিরেও প্রদীপ জ্বালানো হয়। শিব মন্দির ছাড়াও, অন্যান্য মন্দিরে, রাস্তার মোড়ে এবং অশ্বত্থ গাছ এবং তুলসী গাছের নীচে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি এই দিনে ভগবান শিবকে দর্শন করার এবং তাঁর পূজা করার প্রথাও রয়েছে। এই প্রথায় মানুষ জ্ঞান ও সম্পদ লাভ করে। তার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়।
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী রাজ্যে এই উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। মনে করা হয় মহাদেবের শহর বারাণসী। এই শহর পবিত্র ঘাটের শহর হিসেবেও পরিচিত। দেব দীপাবলির দিন ভোলেনাথের সমস্ত ভক্তরা একসঙ্গে মা গঙ্গার ঘাটে লক্ষাধিক প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে দেব দীপাবলি উৎসব উদযাপন করেন।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে সমস্ত দেবতারা কাশীর ঘাটে আসেন এবং মহাদেবের আগমনের আনন্দে দীপাবলি উদযাপন করেন। এই দিনে গঙ্গা দেবীর পূজা করা হয়। কাশীর রবিদাস ঘাট থেকে লেরাপ রাজ ঘাট পর্যন্ত লক্ষাধিক দিয়া জ্বালানো হয়। প্রশ্ন হল কাশীতে দেব দীপাবলির এত গুরুত্ব কেন।
জেনে নিন বারাণসীতে দেব দীপাবলি উদযাপনের কারণ
কাশীতে দেব দীপাবলি উদযাপনের কারণ ঈশ্বরের লীলার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিংবদন্তি অনুসারে, একসময় ত্রিপুরাসুর নামে এক অসুর অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এমনকী দেবতাদের হাত থেকে স্বর্গও দখল করেছিল। মনে করা হয় প্রয়াগেই ত্রিপুরাসুর দীর্ঘকাল ধ্যান করেছিলেন এবং তার তপস্যার দৃঢ়তার কারণে স্বর্গ-মর্ত-পাতাল টলমল করে উঠেছিল। ত্রিপুরাসুরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মাদেব তাঁর কাছে হাজির হলে ত্রিপুরসুর বর চাইলেন। তিনি চাইলেন এমন বর যাতে কোনও দেবতা, পুরুষ, নারী, জীব, পশু, পাখি, নিশাচর তাকে হত্যা করতে পারবে না। এই বর পেয়ে ত্রিপুরাসুর অমর হয়ে গেলেন। শুরু করলেন পৃথিবীর উপর অত্যাচার। স্বর্গের দিকেও তার নজর পড়ল। দেবতারা তার সঙ্গে লড়াইয়ে হারতে শুরু করলেন। কোনও দেবতা তাকে হত্যা করতে পারল না। এমনকী বিষ্ণুদেবও তাকে ধ্বংস করতে অস্বীকৃত হলেন। কিন্তু তিনি বিষ্ণু সকল দেবতাকে মহাদেবের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করতে বললেন।
ব্রহ্মাদেব এবং সমস্ত দেবতারা শিবের কাছে পৌঁছে ত্রিপুরাসুরকে বধের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করলেন। মহাদেব তিন জগতে ত্রিপুরাসুরকে খুঁজতে যাত্রা করলেন। এরপর কার্তিক পূর্ণিমার দিনে প্রদোষকালে অর্ধনারীশ্বর রূপে মহাদেব ত্রিপুরাসুরকে বধ করেন। সেই থেকে কাশীতে সমস্ত দেবতারা শিবের জয়ের আনন্দে প্রদীপ জ্বালান যা দেব দীপাবলি নামে পরিচিত। ১৯১৫ সালে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে এখানে প্রথমবারের মতো দেব দীপাবলি উদযাপন করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।