গঙ্গায় (Ganga River) একটা ডুব দিলেই হবে দশজন্মের পাপ থেকে মুক্তি। জন্ম জন্মান্তর ধরে এই প্রবাদ চলে আসছে। সেই কারণে প্রতিবছর বহু মানুষ একটি বিশেষ দিনে গঙ্গা স্নান (Ganga Snan) করে পাপ থেকে মুক্তি পেতে চান। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের দশমী তিথিটি হিন্দুরা “গঙ্গাবতরণ” বা গঙ্গার মর্ত্যে অবতরণের স্মরণে বিশেষভাবে উদ্যাপন করে। এই দিনটিকে “দশহরা” (Ganga Dussehra) বলে। হিন্দুমতে, এই দিনটি গঙ্গাস্নানের জন্য বিশেষভাবে প্রশস্ত। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই দিন গঙ্গাস্নান করলে দশবিধ বা দশ জন্মের পাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রাজা ভগীরথের তপস্যা খুশি হয়ে দেবী গঙ্গা এই দিন ভগীরথেক পূর্বপূরুষদের অভিশপ্ত আত্মাকে শুদ্ধ করতে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন। গঙ্গা যেহেতু স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে এসেছিলেন, তাই তাকে মর্ত্য থেকে স্বর্গে উত্তরণের একটি মাধ্যমও মনে করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল – এই তিন লোকে প্রবাহিত বলে গঙ্গার অপর নাম ত্রিলোকপথগামিনী। আবার, জীবিত ও মৃত সব জীবেরই যাত্রাপথে অবস্থিত বলে, তার অন্য নাম তীর্থ।
সাধারণত, পৃথিবীতে দেবী গঙ্গার আগমন উপলক্ষেই গঙ্গা দশহরা উত্সব পালিত হয়। গঙ্গা হিন্দুদের কাছে পবিত্র নদী। তারা এই নদীকে গঙ্গা দেবীজ্ঞানে পূজা করেন। সাধারণত নির্জলা একাদশীর একদিন আগে এই উৎসব পালিত হয়। এবার হস্ত নক্ষত্র ৯ জুন ভোর ৪টে ৩১ মিনিট থেকে শুরু হবে এবং ১০ জুন ভোর ৪টে ২৬ মিনিট পর্যন্ত চলবে। তবে এবছর, গঙ্গা দশেরার তারিখ বিভিন্ন ধর্মের দ্বারা আলাদা আলাদাভাবে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, যাঁরা এই দিন গঙ্গায় এসে স্নান করতে পারেন না, তারা তাদের বাসস্থানের নিকটবর্তী জলাশয়ে বা নদীতে স্নান করেন। কারণ, হিন্দু বিশ্বাসে এই দিন সকল জলাশয় ও নদী গঙ্গাতুল্য হয়।
পৌরানিক কাহিনি
হিন্দুদের প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গঙ্গাকে আবাহন করা হয়। মনে করা হয়, সকল পবিত্র জলেই গঙ্গা অধিষ্ঠিত। মহাভারতে, রাজা শান্তনু ও দেবী গঙ্গার প্রেমে পড়ার একটি বর্ণনাও রয়েছে, যা গঙ্গা নদীর সঙ্গে সম্পর্কিত। শান্তনু গঙ্গাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে, গঙ্গা সম্মতি দেন, কিন্তু তিনি রাজাকে একটি শর্তেই বিয়ে করতে রাজি হোন। সেই সময় জানিয়েছিলেন বিয়ের পরও তিনি তার ইচ্ছামতো জীবনযাপন করবেন, কোনও বাধা ছাড়াই। রাজা গঙ্গাকে প্রশ্ন করলে বা তার কাজে বাধা দিলে তিনি তাকে ছেড়ে চলে যাবেন। শান্তনু দেবী সেই শর্ত মেনে নেন ও দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর একের পর এক শিশুকে নদীতে ফেলে দিলেও রাজা শান্তনু চুপ করে থাকেন। গঙ্গার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হলেও তাকে হারানোর ভয় আরও চেপে বসে। কিন্তু অষ্টম সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর গঙ্গা যখন বুঝতে পারে শিশুটিকে নদীতে দিয়ে আসবে, তখন রাজা আর তাকে না থামিয়ে পারেননি। গঙ্গাক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন তিনি তাঁর শিশুদের ঘন ঘন নদীতে ফেলে দিচ্ছেন। সেই কথা শুনে গঙ্গা বলেছিলেন, তুমি আমার আজ কথার খেলাপ করেছ। শর্ত অনুযায়ী এই শিশুটি আপনার সঙ্গেই থাকবে, কিন্তু আমি আপনার সঙ্গে থাকতে পারব না। আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই ভাবে গঙ্গাকে শান্তনু নিজের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তাঁর শেষ সন্তানকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম দেবব্রত।