কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে প্রতি বছর গোবর্ধন পুজো পালিত হয়। এ বছর আগামী ২৬ অক্টোবর পালিত হবে এই উত্সব। এই দিন গিরিরাজ অর্থাত গোবর্ধন পর্বত ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজো করা হয়। শুধু তাই নয়, এই দিন অন্নকূট পুজোও পালিত হয়। কারণ এই দিন অন্নকূট নিবেদনের প্রথা রয়েছে। প্রথা অনুযায়ী, এদিন বাড়ির আঙিনায় গোবর্ধন পর্বত ও পশুর আকৃতি গোবর থেকে তৈরি করা করা মূর্তি রীতিমত পুজো করা হয়। কথিত আছে, গোবর্ধন পুজোর কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে সেই দ্বাপর যুগ থেকে।
কিংবদন্তী কী বলছে
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, একদিন শ্রী কৃষ্ণ দেখেন, যে সমস্ত ব্রজবাসীরা বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরি করছেন, পূজার মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে এবং সকাল থেকেই পুজোর সামগ্রী সংগ্রহে ব্যস্ত সবাই। তখন শ্রী কৃষ্ণ যশোদাকে জিজ্ঞেস করেন, “মায়া” কার পূজার জন্য আজ এই সমস্ত মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে? যশোদা সেইসময় বলেন যে ব্রজবাসী ইন্দ্রদেবের পূজার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন কৃষ্ণ বললেন কেন সব মানুষ ইন্দ্রদেবের পূজা করছে? এ কথা শুনে মা যশোদা তাকে বলেন, ইন্দ্রদেব আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। সেই কারণেই খাদ্য উৎপাদন ভাল হয় ও গরুর চরণভূমি হয় বিস্তৃত।
যশোদার কথা শুনে কৃষ্ণ বলেন, বৃষ্টি বর্ষণ করা ইন্দ্রদেবের কর্তব্য। আমরা যদি পূজা করতে চাই, তবে আমাদের গোবর্ধন পর্বতে করা উচিত। কারণ আমাদের গরু সেখানে চরে এবং আমরাও গোবর্ধন পর্বত থেকে ফল, ফুল, শাকসবজি ইত্যাদি পাই। এরপর ব্রজবাসী কৃষ্ণের কথায় মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রদেবের পরিবর্তে গোবর্ধন পর্বতের পুজো শুরু করেন। দেবরাজ ইন্দ্র এই কর্মকীর্তিকে ভাল চোখে দেখেননি। অপমান মেনে নেননি তিনি। গ্রামবাসীদের কর্মকাণ্ডে ক্রদ্ধ হয়ে প্রলয়ঙ্করী মুষলধারে বৃষ্টি শুরু করেন। যার ফলে চারদিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বন্য়া পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিবার-পরিজন বাঁচাতে সবাই এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। তখন ব্রজবাসীরা এই বিপর্যয়ের জন্য শ্রীকৃষ্ণকেই দোষারোপ করতে থাকেন। কৃষ্ণের আনুগত্য করার কারণেই এ সব হয়েছে। তাঁর কথায় কাজ করে এখন ইন্দ্রদেবের ক্রোধ বহন করতে হবে সকল গ্রামবাসীকে।
এর পর ইন্দ্রদেবের অহংকার দূর করতে এবং ব্রজবাসীদের রক্ষা করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে হাতের সবচেয়ে ছোট বা কড়ে আঙুল দিয়ে তুলে নেন। তখন সমস্ত ব্রজবাসী গোবর্ধন পর্বতের নীচে আশ্রয় নেয়। সেখানেই চলে গোবর্ধন পুজো। এর পর ইন্দ্রদেব তার ভুল বুঝতে পেরে শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চান ও বর্ষণ করা বন্ধ করেন। এই পৌরাণিক কাহিনির ভিত্তিতেই শুরু হয় গোবর্ধন পুজো।