রামায়ণ অনুসারে, পুরুষোত্তম রামের পরম ভক্ত ও সঙ্গী হলেন হনুমান। রামায়ণের অন্যতম কেন্দ্রীয় একটি চরিত্র। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিতে হনুমানের নানা বীরত্ব ও সাহসের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে হনুমান হলেন মর্ত্যে মহাদেবের আংশিক অবতার হিসেবে দেখা হয়। বায়ু দেবতার অবতার বলেও মনে করা হয়। বেদ, মহাভারত ও রামায়ণে ভগবান হনুমানের উল্লেখ রয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিতেও রয়েছে হনুমানের কৃতিত্ব। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ২০ জুন পালিত হয়েছে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। শ্রীক্ষেত্র থেকে সাতদিনের জন্য মাসির বাড়ি রওনা হোন জগন্নাথ-সুভদ্রা- বলভদ্র। সাতদিন পর ফের মাসির বাড়ি থেকে পুরীর মন্দিরে রওনা হোন তিন ভাইবোন। ২৮ জুন, ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে উল্টো রথযাত্রা।
অনেকেই জানেন না, পুরীতে একটি মন্দিরের সোনার শিকল দিয়ে হনুমানকে বেঁধে রাখা হয়। বর্তমানে এই মন্দিকে বেড়ি হনুমান নামে বেশি পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, একটা সময় সমুদ্রদেব পুরীর জগন্নাথের মন্দিরের তিনবার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলেন। তাই শ্রীক্ষেত্র ও শ্রীধামকে সমুদ্রদেবের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রামের পরমভক্ত হনুমানকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। জগন্নাথের মন্দিরকে রক্ষা করার জন্য চক্রতীর্থে অবস্থান করে সমুদ্রদেবের ভয়ঙ্কর ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছিলেন।
ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, ভগবান জগন্নাথকে শ্রী রামের অবতার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। পুরী শহরের প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত, সিরুলি মহাবীর একটি ছোট মন্দিরে রয়েছে বেড়ি হনুমানের একটি মূর্তি।
প্রতিমাটি কালো ক্লোরাইট দিয়ে তৈরি। এর উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট।
অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাপ্রভু জগন্নাথের স্ত্রী হলেন মহালক্ষ্মী। সাগর রাজা (বরুণ দেব)মেয়েকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। আর তাই মেয়ে-জামাই দেখার ইচ্ছায় বারবার পুরীর শ্রীক্ষেত্রে আসার চেষ্টা করেছিলেন। আর তার জেরে শ্রীক্ষেত্রের পবিত্র ভূমি ও মূল মন্দিরের পবিত্র ২২ ধাপ প্লাবিত হয়েছিল। সমুদ্রের নোনা জলে প্রবেশের কারণে সেখানকার বাসিন্দারা নিয়মিত ক্ষতির সম্মুখীন হোন। ক্ষতির থেকে মুক্তি পেতে জগন্নাথের কাছে অভিযোগ জানালে সমুদ্রকে মাঝপথেই আটকে দেওয়ার জন্য রক্ষক হিসেবে হনুমানকে নিযুক্ত করেন মহাপ্রভু। সতর্ক প্রহরীর মতো রক্ষা করেন হনুমানজি। জগন্নাথ মন্দিরকে সমুদ্রের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করেছিলেন বলেই বেদি হনুমান বলা হয়। শুধু তাই নয় অনেকে এই মন্দিরকে দরিয়া হনুমানও বলে থাকেন। যদিও বেদী হনুমান মন্দিরটি স্থাপত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে খুব বেশি গুরুত্ব রাখে না, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি ওড়িশার সবচেয়ে পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে একটি।
পুরাণ মতে, একবার হনুমানজি অযোধ্যা পরিদর্শনের জন্য পুরীর রক্ষকের দায়িত্ব ফেলে রেখে অযোধ্যা রওনা হোন। হনুমানের অনুপস্থিতিতে সমুদ্র ফের পুরীধামে প্রবেশ করে। এমন অবস্থায় জগন্নাথ হনুমানকে ফের পুরীর মন্দির রক্ষা করার জন্য আহ্বান করেন। এবার আর কোনও রকম ভুল না করে তাঁকে বেড়ি দিয়ে আবদ্ধ করে নির্দেশ দেন, কখনও এই স্থান থেকে ছেড়ে না যান। সুন্দর করে দায়িত্ব পালন করতে হবে তাঁকে। শিকল দিয়ে বেঁধে বজরঙবলীকে পুরীর রক্ষক হিসেবে আনা হলে সেই মূর্তিকে বেড়ি হনুমান বলা হয়।
তাই পুরীর দর্শন করার সময় জগন্নাথের পাশাপাশি বেড়ি হনুমান দর্শন করতে ভোলেন না ভক্তরা।