বগলামুখী (Baglamukhi) বা বগলা হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। “বগলামুখী” শব্দটি “বগলা” (অর্থাৎ, ধরা) এবং “মুখ” শব্দদুটি থেকে উৎপন্ন। এই শব্দটির অর্থ যিনি যাঁর মুখ কোনও কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সক্ষম। তন্ত্র সাধনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুশাসন, শক্তির উপাসনা। এই তন্ত্রের সঙ্গে বগলামুখীর সম্পর্ক রয়েছে বিস্তর।তন্ত্র উপাসনায় বগলামুখী দেবীর বিভিন্ন রূপের আরাধনাকে একটি বিশেষ স্থানে রাখা হয়েছে। বগলামুখীকে” “পীতাম্বরা দেবী” বা “ব্রহ্মাস্ত্র-রূপিণী”ও বলা হয়। তিনি একটি গুণকে বিপরীত গুণে পরিবর্তন করে পারেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। যেমন, তিনি বাক্যকে নিঃস্তব্ধতায়, জ্ঞানকে অজ্ঞানে, শক্তিকে শক্তিহীনতায়, পরাজয়কে জয়ে পরিবর্তন করেন।
দেবীর পূজা মূলত শত্রুদের চমক দেওয়ার জন্য করা হয়। শত্রুরা নিষ্ক্রিয় হয়ে কোনও ক্ষতি করতে পারে না। দেবীর প্রতিটি মন্ত্রে মহামন্ত্রের প্রভাব রয়েছে। দেবীর অন্য রূপ পীতাম্বরী পূজা করলে কর্মে সফলতা পাওয়া যায়। সাধকদের অন্তত নিয়মিত বীজ মন্ত্র জপ করা উচিত। মনে করা হয়, এই বীজমন্ত্রের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেবতার জীবন। দেবী ভগবতীর সেবা ও মন্ত্র উচ্চারণ করে নামের স্তুতি করে করা হয়। পৌরাণিক মতে, নারদ ঋষি যেমন প্রতি মুহূর্তে ভগবান বিষ্ণুর নাম জপ করতেন, তেমনি সাধকদেরও প্রতি মুহূর্তে দেবী পীতাম্বরীর নাম জপ করা উচিত।
বগলামুখী তন্ত্র সাধনা কীভাবে করবেন
সাধককে সাধনা শুরু করার আগে ভক্তি ভরে দেবী ভগবতীর পূজা করা উচিত। পূজা মানে সেবা। উপাসনা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। কায়িকা অর্থ দেহ, বাচিক অর্থ বাচন এবং মানস অর্থ মানসিক। দেবীর পঞ্চোপচার পূজা যেমন শ্লোক, অর্ঘ্য, স্নান, ধূপ, প্রদীপ, নৈবেদ্য ইত্যাদি করা হয়। মন্ত্র পাঠ ব্যবহার করার সময় দেবীর নিজ নিজ স্তুতি পাঠ করা হয়। তন্ত্রমতে, সাধক যখন ভক্তি সহকারে দেবতার পূজা করেন এবং অবিরাম মন্ত্র জপ করতে থাকেন, তখন দেবী নিজেই সমস্ত জাগতিক কাজের ভার বহন করেন এবং অবশেষে মোক্ষ দান করেন। সাধনা করতে হলে নিঃস্বার্থভাবে করা উচিত।
তন্ত্র সাধনার উপকারিতা
তন্ত্রমতে বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী বগলামুখী মন্ত্র জপের অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। বগলামুখী মন্ত্র শত্রুদের বিনাস করে।
– বগলামুখী মন্ত্র বিশেষ করে প্রশাসন ও রাষ্ট্র, রাজনীতিবিদ, ঋণ বা মামলা-মোকদ্দমা সমস্যা ইত্যাদির সম্মুখীন হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।
– ব্যবসায় ক্ষতি, আর্থিক সমস্যা, আদালতে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত, মিথ্যা অভিযোগ এবং ঋণের জালে ডুবে গেছেন, তাঁদের ত্রাণকর্ত্রী হিসেবে বগলামুখী মন্ত্র জপ করতে পারেন।
– প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, বিতর্ক ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেছেন বা করবেন,তাদের জন্য বগলামুখী মন্ত্র খুবই ভাল। বগলামুখী মন্ত্র জপ অশুভ আত্মা এবং অশুভদৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
– বগলামুখী সাধনা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনে। তবে এই সাধনায় পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতারও যত্ন নেওয়া দরকার। যদি ভুল চিন্তা নিয়ে সাধনা করা হয়, তবে তা ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।
– সাধনাকে নিরর্থকভাবে কারও ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। খাঁটি ও আন্তরিক চিত্তে করা সাধনা সাফল্যের পরিচয় দেয়।