জগদ্ধাত্রী পুজো মানে কিন্তু কেবল চন্দননগর নয়। কৃষ্ণনগরেও ধুমধাম করে পালিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। এখানেও নিয়ম মেনে চারদিন ধরে চলে মাতৃ আরাধনা। আর কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর কেন্দ্রে যে পুজো তা হল চাষাপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো।
মনে করা হয় এই পুজোই চন্দননগরের সবেচেয়ে প্রাচীন। জনশ্রুতি নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই পুজোর। নবাবের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে নবাব এসে পৌছেছিলেন চন্দননগরে। কিন্তু মহারাজের মন ভারাক্রান্ত। কারণ দুর্গার পুজোর সময় তিনি ছিলেন কারাবন্দি। শেষে একদিন দেবীই স্বপ্নাদেশ দিয়ে রাজাকে বলেন কার্তিক মাসে শুক্লা পক্ষে তাঁর আরাধনা করতে। চতুর্ভুজা রূপে দেবীকে আরাধনার নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতোই মায়ের আদেশে বন্ধু ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর সহযোগিতায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। পরে কৃষ্ণনগরে ফিরেও জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু করেন তিনি। সেই পুজোই আজকের চাষা পাড়ার বুড়িমার পুজো।
দেখতে দেখতে পুজোর বয়স ২৫০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু রাজবাড়ি পুজো কী ভাবে হয়ে উঠল বারোয়ারি পুজো তার নেপথ্যেও আছে এক কাহিনি। শোনা যায় একবার পুজোর কাজকর্ম দায়ভার কে সামলাবেন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তখন দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন চাষাপাড়ার লেঠেলরাই নাকি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই পুজো। সেই মতো ১৭৭২ সালে শুরু হয় মাতৃ আরাধনা।
চাষাপাড়া ছাড়াও কৃষ্ণনগরে আরও অনেক জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। শোনা যায় জগদ্ধাত্রী পুজোকে আরও ছড়িয়ে দিতে নাকি বহু পুজোয় অনুদান দিতেন কৃষ্ণচন্দ্র।
বুড়িমার সাজেছে বিশেষ চমক। রয়েছে সোনার মুকুট। বুড়িমা’র কপাল জুড়ে থাকে বিভিন্ন আকারের সোনার টিপ। গলায় সোনার চিক-সহ একাধিক চেন, মালা নেকলেস, সীতাহার। হাত ভর্তি সোনার বালা থেকে শুরু করে মানতাসা। সঙ্গে জড়োয়ার সেট। বুড়িমার পায়ের নুপুরও হবে সোনার। দেবীর বাহন সিংহকেও পড়ানো হয় স্বর্ণালঙ্কার-সহ সোনার মুকুট।
মায়ের ভোগেও থাকে আয়োজন। কমপক্ষে ২ লক্ষ ভক্তের জন্য থাকে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা। আগের দিন রাতভর চলে ভোগ তৈরির কাজ। তারপর সেই ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। ভোগ বিতরণের জন্য আছে কুপ্ন ব্যবস্থাও।
মায়ের বিদায় বেলাতেও আছে বিশেষ রীতি। অত বড় প্রতিমা কিন্তু ভক্তদের কাধে চেপেই বিসর্জনের পথে যাত্রা করেন ‘বুড়িমা’। কৃষ্ণনগরের প্রথা সব ঠাকুর বিসর্জন হওয়ার পরে, সর্ব শেষে বিসর্জন হয় ‘বুড়িমার’। প্রথমে কাধে করে মূর্তি নিয়ে প্রদক্ষিণ করা হয় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। তারপর প্রথা মেনেই জলঙ্গীর ঘাটে বিসর্জন দেওইয়া হয় দেবীকে।