বিশাল মূর্তি। তাঁর চোখে প্রখর তেজ। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ভিড় করেন তাঁর পুজোয়। কথিত, ভক্তিভরে মায়ের কাছে কিছু চাইলে, কখনও খালি হাতে ফেরান না মা। তিনি সবার ‘বড়মা’। তাই তো লোকে বলে ‘ধর্ম যার যার, বড়মা সবার’। কিন্তু কী ভাবে শুরু হল ‘বড়মা’র পুজো? কী তাঁর আদি নাম? রইল এই প্রতিবেদনে।
১০০ বছরের বেশি পুরনো কথা। নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়েই নবদ্বীপ গিয়েছিলেন রাস দেখতে। সেখানে গিয়েই রাধা কৃষ্ণের বড় বড় মূর্তি দেখে ভবেশবাবুর চোখের সামনে ভেসে ওঠে বড় একটি কালী মূর্তি। ঠিক করলেন মাতৃ আরাধনা করবেন তিনিও।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাড়ি ফিরেই শুরু হল পুজোর প্রস্তুতি। পরের বছর পুজো শুরু করলেন ভবেশবাবু। সেই থেকেই পুজোর নাম হল ‘ভবেশকালী’।
ভবেশকালীর মূর্তির উচ্চতা ছিল ২১ ফুট। এর আগে নৈহাটিতে এত বড় মূর্তির পুজো হয়নি। তাই লোক মুখে মা পরিচিতি পেলেন ‘বড়মা’ নামে। ক্রমে সেই নামই ছড়িয়ে পরে লোকমুখে।
দেখতে দেখতে একশো বছর পার করেছে এই পুজোর বয়স। আজও সেই ২১ ফুটের মূর্তি পূজিত হয় কালী পুজোর সময়। পুজোর ২৪ ঘন্টা আগে থেকে শুরু হয় মাকে গয়না পরানো। শোনা যায় মায়ের এত গয়না আছে যে তা কোনও বছরই পরিয়ে শেষ করা যায় না। গত বছর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মায়ের নতুন মন্দির, সেখানে স্থাপন করা হয়েছে কষ্টি পাথরের মূর্তিও। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মানত করেন ‘বড়মা’-এর কাছে। গঙ্গায় স্নান করে পুজো মন্ডপ অবধি দণ্ডি কেটে আসেন ভক্তের দল। মনবাঞ্ছা পুরণ হলে মায়ের কাছে মানত করা জিনিস দান করে আসেন ভক্তরা। নৈহাটি শহরের প্রথা, বড়মা-এর পুজো না হলে অন্য কোথাও পুজো শুরু হয় না। আবার ‘বড়মা’-এর বিসর্জন না হলে, অন্য কোনও প্রতিমার নিরঞ্জন হয় না। নিরঞ্জনের সাজেও থাকে চমক। সোনার গয়না খুলে ফেলে মাকে সাজানো হয়, ফুলের সাজে। সেই ভাবেই বিসর্জন হয় মাতৃ মূর্তির। শুরু হয় আবার এক বছরের অপেক্ষার।