বাংলাদেশের এই মন্দিরের মূল বিগ্রহ এখন কলকাতাতেই!

Hindu Temples in Bangladesh: প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো মন্দিরের মূল বিগ্রহ টি ১৯৪৮ সালে দেশভাগ পরবর্তী দাঙ্গার সময়ে লুন্ঠনের হাত থেকে রক্ষা করতে গোপনে ঢাকা থেকে কলকাতায় সরিয়ে আনা হয়। তবে বাংলাদেশে যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি বর্তমানে রয়েছে. সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের খুব কাছে অবস্থিত। এখনও রয়েছে লাল ও হালকা হলুদ রঙের নাটমন্দির, সৌধের সমষ্টি।

বাংলাদেশের এই মন্দিরের মূল বিগ্রহ এখন কলকাতাতেই!
Follow Us:
| Updated on: Aug 08, 2024 | 10:03 AM

দীপ্তা দাস

বাংলাদেশ। দেশের নামটাই এখন যথেষ্ট। প্রশ্ন। উদ্বেগ। অশান্ত। ধ্বংস। স্বাধীন। পরাধীন। রাজনীতি। কূটনীতি। অস্থিরতা। হিন্দুত্ব। সব কিছু নিয়ে সারা বিশ্বের পাখির চোখ এখন সবুজ-লাল পতাকার দেশটির দিকে। বাঙালি চেতনায় ভরা এই দেশটির কাছে কি নেই! সম্পত্তি, ধন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ধর্ম, চাষবাস কি নেই সেখানে। এমনকি এপার বাংলার থেকে ওপার বাংলায় হিন্দু মন্দিরের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেশি। হিসেব বলছে, বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৪০, ৪৩৮টি হিন্দু মন্দির। ২০১১ সালের এক সমীক্ষা বলছে, ভারতের এই প্রতিবেশী দেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও, দেশের ৩৫০ জন হিন্দু পরিবার পিছু একটি করে মন্দির রয়েছে। ফলে এই দেশে মন্দিরের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক।

বাংলাদেশে জাতীয় ও সর্ববৃহত্‍ হিন্দু মন্দির রয়েছে ঢাকাতেই। এই মন্দির বিখ্যাতও বটে। বাংলাদেশের রাজধানীর নামকরণই হয়েছে এই মন্দিরের নামে। ঢাকেশ্বরী মন্দির। এর অর্থ হল ঢাকার ঈশ্বরী। আবার অনেকে বলেন ঢাকার রক্ষাকর্ত্রী। ইতিহাস বলছে, সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করে সতীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই বিখ্যাত শক্তিপীঠে সতীর মুকুটের মণি পড়েছিল। তবে ঢাকার এই বিখ্যাত মন্দিরের আসল বিগ্রহ রয়েছে কলকাতার কুমারটুলি এলাকার দুর্গাচরণ স্ট্রিটের শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাখা রয়েছে। প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো মন্দিরের মূল বিগ্রহ টি ১৯৪৮ সালে দেশভাগ পরবর্তী দাঙ্গার সময়ে লুন্ঠনের হাত থেকে রক্ষা করতে গোপনে ঢাকা থেকে কলকাতায় সরিয়ে আনা হয়। তবে বাংলাদেশে যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি বর্তমানে রয়েছে. সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের খুব কাছে অবস্থিত। এখনও রয়েছে লাল ও হালকা হলুদ রঙের নাটমন্দির, সৌধের সমষ্টি। রয়েছে অন্তর্বাটী ও বহির্বাটী। পিছনে রয়েছে একটি প্রাচীন দীঘি। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে এক কিংবদন্তী। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, রাজা আদিসুর রাণীকে বুড়িগঙ্গার কাছে এক জঙ্গলে নির্বাসন দিলে সেখানে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। সেই পুত্রের নাম বল্লাল সেন। জঙ্গলেই বেড়ে ওঠা তাঁর। শৈশবে জঙ্গলের মধ্যে এক দেবীমূর্তি দেখতে পান। সেই সময় থেকে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, এই দেবীমূর্তিই আর কেউ নন, দেবী দূর্গা। তিনিই গোটা জঙ্গলকে রক্ষা করেন। জঙ্গলে বাসিন্দাদের আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করেন তিনিই। এরপর রাজা হয়ে ক্ষমতায় আসলে তিনি দেবী দূর্গারূপে ওই মূর্তিটি ঢাকেশ্বরী মন্দির হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু তাই নয়, দেবী মূর্তিটি ঢাকা অবস্থায় পাওয়া যায় বলে দেবীর নাম হয় ঢাকেশ্বরী।

আবার পৌরাণিক কাহিনি মতে, দেবী সতী দেহের ৫১টি খণ্ড বিচ্ছিন্ন হলে বাংলাদেশের ঢাকা শহরেও একটি খণ্ড পড়ে। সতী দেহের কিরিটির ডাক বা উজ্জ্বল গয়নার একটি অংশ পড়ে। সেই স্থানেই তৈরি হয় আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির। পরাধীনতার তকমা ছেড়ে দেশভাগের গণ্ডি পেরিয়ে যে অরাজকতা ও দাঙ্গার সময় দেখেছিল, সেই সময় থেকে এই মন্দিরকে রক্ষা করতে ও লুন্ঠন থেকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি গোপনে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় বিগ্রহ। বিশেষ একটি বিমানে করে ঢাকেশ্বরীর আসল মূর্তিটি কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তবে কলকাতায় আনার পর প্রথমে হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরীর বাডিতে পুজো করা হয়। এরপর কুমারটুলিতে দেবী মন্দির নির্মাণ করেন দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী। এই দেবীর মূর্তি মহিষামর্দিনী দূর্গা রূপেই পুজো করা হয় আজও। পাশে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। প্রতিবছর দুর্গাপুজোর সময় ধুমধাম করে পুজো করা হয়।

ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির ছাড়াও বাংলাদেশে রয়েছে প্রচুর মন্দির। ঢাকাতেই রয়েছে জগন্নাথদেবের মন্দির। রথের সময় রথ বের করে ধুমধাম করে পালিত হয় রথ উত্‍সব। খাগড়াছড়ির রয়েছে ইস্কনের মন্দিরও। এখানে বলে রাখা ভাল, পশ্চিমবঙ্গে যেমন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সতীপীঠও ও শ্ক্তিপীঠ রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে ৫১ পীঠের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পীঠ। যেমন সিলেটের সুরমা নদীর তীরে শ্রীহট্ট জেলার রয়েছে মহালক্ষ্মী মন্দির।যেখানে সতীর ঘাড়ে একাংশ পড়েছিল। চট্টগ্রামেও রয়েছে একটি সতীপীঠ। এখানে দেবী ভবানী ও শিব চন্দ্রশেখর হিসেবে পূজিত। কথিত আছে, এই স্থানে পড়েছিল সতীর ডান হান।পৌরাণিক কাহিনিতে রয়েছে, কলি যুগে সীতাকুণ্ডের কাছে শিব তথা চন্দ্রশেখর চন্দ্রনাথ পাহাড়ে রোজ দেখতে আসেন। এছাড়া বাংলাদেশের খুলনার ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী মন্দির। কথিত আছে,এখানে দেবীর হাতের তালু যুগল ও দুই পদতল পড়েছিল।

এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের ভবানীপুরেও রয়েছে সতীপীঠের অন্যতম পীঠ। রাজশাহীর করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরে পড়েছিল সতীর বাঁ নিতম্ব ও পোশাক। এখানে দেবী অপর্ণা রূপে। এখানে শিব পূজিত হন ভৈর। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে নাটোরের রাজা এই মন্দিরে নাকি ধ্যান করতেন।

এছাড়া বাংলাদেশের বরিশালে ও রয়েছে একটি সতীপীঠ। যদিও বরিশালের মধ্যে নয়। শিকারপুর গ্রামের সুগন্ধায় শক্তিপীঠ রয়েছে। কথিত আছে, এই শক্তিপীঠের দেবী সুনন্দা নামে পূজিত। এখানে সতীর নাক পতিতহয়েছিল। তাই এই পীঠের নাম সুগন্ধা। উল্লেখ্য, এই মন্দিরে শিব ত্র্যম্বক রূপে পূজিত হন।এছাড়া বাংলাদেশের আরও বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। সেগুলির মধ্য়ে অন্যতম হল, মোঘল আমলে নির্মিত উলিপুরের ধামশ্রেণী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির,রাজশাহীর পুঁথিয়া মন্দির। সীতাকুন্ড এলাকায় চন্দ্রনাথ মন্দির। নারায়ণগঞ্জের বারোদীতে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। কুড়িগ্রামে জগন্নাথ নামহট্ট মন্দির। কুড়িগ্রামে চণ্ডী মন্দির। নাগেশ্বরী উপজেলার কাচারী পয়রাডাঙ্গায় কামাক্ষা মাতা ঠাকুরণী মন্দির। কুমিল্লায় মহাতীর্থ চণ্ডীমূড়া সেবাশ্রম, রাজ কালী বাড়িমন্দির। কক্সবাজারের মহেশখালির আদিনাথ মন্দির।