হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা মনে করেন, নির্জলা একাদশী হল সমস্ত একাদশী তিথির মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র। হিন্দুরা মনে করেন, এই বিশেষ তিথিতে, নির্জলা একাদশীর উপর উপবাস পালন করলে সারা বছরের জন্য পূণ্য লাভ করা সম্ভব। জ্যৈষ্ঠ শুক্লের একাদশী তিথিতে নির্জলা একাদশীপালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযাযী, এ বছর ১০ জুন নির্জলা একাদশীর উপবাস পালিত হবে। এই একাদশীতে উপবাস রাখলে সারাদিনে এক বিন্দু জল পান করা নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। তাই একে নির্জলা একাদশী বলা হয়। প্রতি মাসে দুটি একাদশী হয়, একটি কৃষ্ণপক্ষে এবং অন্যটি শুক্লপক্ষে। আগেকার দিনে মনে করা হত, এই দিনে ব্রাহ্মণ বা কোনও দুঃস্থ ব্যক্তিদেরকে জলের তেষ্টা মেটানোর জন্য পাত্র প্রদান করলে গৃহে শান্তি বিরাজ করে।
সন্তানলাভের আশায় অনেকেই এই একাদশী ব্রত পালন করে থাকেন। শুক্লপক্ষের একাদশীর এক বছর উপবাস করতে হয়। শ্রীহরিকে সন্তুষ্ট রাখতে ও তাঁর কৃপাবৃষ্টির জন্য অনেকে একাদশীর ব্রত পালন করে থাকেন। বিশ্বাস করা হয় যে নির্জলা একাদশীর দিন জল ছাড়া উপবাস করলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়। কথিত আছে যে যে ব্যক্তি বছরের সমস্ত একাদশীতে উপবাস করতে পারেন না, তিনি এই একাদশীতে উপবাস পালন করে থাকলে সব একাদশীর সুবিধা একসঙ্গে পালন করতে পারেন।
নির্জলা একাদশীর শুভ মুহুর্ত:
তারিখ – আগামী ১০ জুন, ২০২২
একাদশী তিথি শুরু হবে: ১০ জুন সকাল ৭.২৫ মিনিটে
একাদশী তারিখ শেষ হবে: ১১ জুন বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে
পুরাণ মতে, নির্জলা একাদশী ভীমসেনী একাদশী নামেও পরিচিত। মনে করা হয় যে মহাভারত আমলে পাণ্ডু-পুত্র ভীম একবার মহর্ষি বেদব্যাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে একাদশী উপবাস না করে একাদশীর উপবাসের ফল কীভাবে পাওয়া যায়? মহর্ষি বেদব্যাস তখন ভীমকে নির্জলা একাদশী উপবাস পালন করার পরামর্শ দেন। সেই সময় মহর্ষি নির্দেশ দিয়ে বলেন, জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর দিন নির্জলা উপবাস রেখ। আর যে ব্যক্তি একাদশী তিথির সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশী তিথির সূর্যোদয় পর্যন্ত নির্জলা থাকে ও শ্রদ্ধা-সহ নির্জলা ব্রত পালন করে, সে বছরে সমস্ত একাদশীর ফল এই একটি একাদশী উপবাস করেই লাভ করতে পারে। তখন বেদব্যাসের আজ্ঞায় ভীম নির্জলা একাদশী পূর্ণ করেছিলেন।
হিন্দু ধর্ম মতে, কোনও ব্যক্তি যদি শ্রদ্ধার সঙ্গে এই একাদশী ব্রত পালন করেন, তা হলে তিনি সমস্ত একাদশী ব্রতর ফলে প্রাপ্ত পুণ্য লাভ করে। সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করেন ওই ব্যক্তি। ব্রতর পাশাপাশি এদিন দানও করা হয়। এদিন দান করলে পুণ্য লাভ করা যায়। এদিন জলভর্তি ঘট দান করা অত্যন্ত শুভ। এর ফলে ব্যক্তি সুখী জীবন ও দীর্ঘায়ু লাভ করে। এই একাদশী ব্রত পালনের কিছু রীতি রয়েছে, সেগুলি কী কী তা দেখে নিন…
পুজোবিধি
– এদিন সকালে স্নান করে বাড়ির পূজাস্থানে প্রদীপ জ্বালান।
দেবতাদের স্নান করিয়ে স্বচ্ছ বস্ত্র পরান।
– এদিন বিষ্ণুর পুজোয় হলুদ বস্ত্র ব্যবহার করা উচিত। হলুদ ফুল ও ফল অর্পণ করুন।
– পুজোর সময়ে ‘ওম নম: ভগবতে বাসুদেবায়’ মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়।
– বিষ্ণুর সঙ্গে লক্ষ্মীরও পুজো করুন।
– ভগবান বিষ্ণুর পুজোয় তুলসী ব্যবহার করবেন। ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী, তুলসী ছাড়া বিষ্ণুর আরাধনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
এর পর বিষ্ণু এবং লক্ষ্মীর আরতি করুন।
– নৈবেদ্য অর্পণ করুন। সাত্বিক নৈবেদ্য অর্পণ করবেন। এদিন সারা রাত না ঘুমিয়ে ভজন-কীর্তন করুন।