ভাইবোনের সম্পর্ক কখনও ঠুনকো হয় না। রাখীর দিন সেই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে হিন্দু, জৈন ও শিখরা রাখী বন্ধনের মত একটি পবিত্র উত্সবের মধ্যে দিয়ে প্রীতিবন্ধনে জড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সারা দেশ জুড়েই রাখি উত্সব পালন করা হয়। এই দিনে ভাই বা দাদার ডান হাতের কবজিতে রাখির সুতো পরিয়ে বোনেরা মঙ্গলকামনা করেন। তবে জনসাধারণের পাশাপাশি দেব-দেবীরাও এই উত্সবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাখী পূর্ণিমার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেও গামহা পূর্ণিমা নামে উত্সব পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এইদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। অন্য়ান্য উত্সবের রীতি-নিয়মগুলির মতই এইদিন বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মন্দিরে অধিষ্ঠিত ভগবান জগন্নাথ ও বলরামের জন্য বিশেষ একটি রাখী তৈরি করা হয়।
ঐতিহ্য অনুসারে, পাতারা বিসয়ী সেবাকারীরা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য রাখি তৈরি করেন। সেই রাখীকে পাতা রাখী বলা হয়। এই রাখিই পূর্ণিমার বিশেষ শুভক্ষণে ভাইদের রাখী বেঁধে দেন। মন্দিরের চিতালগী অমবস্যার আচার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ৫৪টি আরিকা বাদামের মালা বা গুয়ামালা-সহ রাখী। এ বছর বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে গাম পূর্ণিমা।
উত্সবরে ১০দিন আগে, মন্দিরের প্রশাসন বসুঙ্গা পাতা (কাপডডা) সরবরাহ করা হয়। ভগবান জগন্নাথ ও বলরামের জন্য ৪টি রাখি ও মন্দিরের অন্যান্য দেবতাদের জন্য ১০টি করে ছোট রাখী বসুঙ্গা পাতা তৈরি করা হয়। এরপর রাখী ও গুয়ামালাকে মন্দিরের নিয়ে যাওয়া হয়।
বাসুঙ্গা পাতা লাল, সবুজ ও বেগুনি ও হলুদ রঙের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। একটি চিরুনির সাহায্যে কাপড়টি সুতোয় টুকরো টুকরো করা হয়। চার রঙের পাটা দিয়ে সেবকরা চারটি স্তরের রাখী তৈরি করেন ।
সেবকরা জগন্নাথের জন্য হলুদ ও লাল রঙের গুয়ামালা তৈরি করেন। অন্যদিকে বলরামের জন্য বেগুনি ও নীল রঙের রাখী তৈরি করেন। শাস্ত্র অনুসারে বলরাম হলেন কৃষকদের অধিপতি। গাম পূর্ণিমার দিনেই তাঁর জন্ম। এই দিনে মন্দিরে বলরামকে ঘিরে আচার-অনুষ্ঠান করা হয়।