শরত্কালে দুর্গাপুজোর পরেই শুরু হয় বাঙালির পার্বণ ও উত্সবগুলি। সেই উত্সবের মধ্যে রাস পূর্ণিমা বা শারদ পূর্ণিমা অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে এই লৌকিক উত্সব পালিত হয়। আদ্যাশক্তি তথা শাক্তদেবীদের বিরাট মাটির তৈরি মূর্তিকে শক্তির বন্দনাই এই পূর্ণিমার মূল উদ্দেশ্য। এ বছর শারদ পূর্ণিমার দিনেও পড়বে চন্দ্রগ্রহণের ছায়া। কথিত আছে, এই পরিস্থিতিতে চাঁদের আলোয় পায়েস বা ক্ষীর রাখা উচিত। তবে এই ব্যতিক্রমী নিয়ম নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। চন্দ্রগ্রহণের সুতক সময় ৯ ঘন্টা আগে শুরু হয়। তাই দুধের তৈরি সুস্বাদু খাবার কোন সময়ে নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া উচিত।
হিন্দু ধর্মে শারদ বা লক্ষ্মী পূর্ণিমার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মনে করা হয় যে, এদিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-রাধারানী ও গোপীদের সঙ্গে মহারাস খেলায় মত্ত থাকেন। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে বলা হয় শারদীয় পূর্ণিমা। এবছর ২৮ অক্টোবর পালিত হবে লক্ষ্মী পূর্ণিমা। এদিন দেবী লক্ষ্মী ও চাঁদের পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এটি দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসে। বাড়িতে সুখ ও সমৃদ্ধিও বয়ে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিনে ক্ষীর তৈরি করে নৈবেদ্য হিসেবে প্রদান করলে ও তা প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করার প্রথা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। শুধু তাই নয়, ওই ক্ষীর বা পায়েসকে অমৃতের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। শারদ পূর্ণিমার দিনে ক্ষীর নিবেদন করলে তা শুভ হয়। কিন্তু এর কারণ কী জানেন?
সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে শারদ পূর্ণিমার দিনে, চন্দ্র ষোলোকলায় পূর্ণ হয় ও অমৃত বর্ষণ করে থাকে। এই সময়ে, চাঁদ থেকে নির্গত রশ্মিগুলি এত শক্তিশালী হয় যে অনেক ধরণের রোগ বা জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণেই এ দিনে চাঁদের আলোয় ক্ষীর রাখা শুভ বলে মনে করা হয়। কথিত আছে, এই সময় ক্ষীর বা পায়েস যাই রাখুন না কেন, তা অমৃত হয়ে যায়। সেই প্রসাদ খেলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
ক্ষীর বা পায়েস কেন তৈরি করা হয়?
কথিত আছে, শারদ পূর্ণিমার দিনে দুধ অমৃতের মতো হয়ে যায়। দুধ হল চন্দ্রের প্রতীক। এই পরিস্থিতিতে দুধ ঘন করে ফুটিয়ে ক্ষীর তৈরি করে প্রসাদ হিসেবে খাওয়া হয়। এ বছরও শারদ পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণের ছায়া রয়েছে। তাই এ বছর চাঁদের আলোর নিচে ক্ষীর বা পায়েস রাখলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
কখন ক্ষীর বা পায়েস দেবেন?
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে, আগামী ২৮ অক্টোবর, সকাল ১টা ৫ মিনিট থেকে পালিত হচ্ছে বছরের দ্বিতীয় ও শেষ চন্দ্রগ্রহণ। শেষ হবে ২টো ২৩ মিনিটে। গ্রহণের সূতক সময় ৯ ঘন্টা আগে শুরু হবে। অন্যদিকে, শারদ পূর্ণিমা শুরু হতে চলেছে আগামী ২৮ অক্টোবর, ভোর ৪টে ১৭ মিনিটে। শেষ হবে ২৮ অক্টোবর গভীর রাত ৩টে ৪৬ মিনিটে। হিন্দু ধর্ম মতে, এ বছর শারদ পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণের ছায়া পড়ায় ক্ষীর দেওয়া উচিত নয়। পুজো করাও শুভ নয়। কারণ সূতক সময় শুরু হওয়ার পরে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এদিন মন্ত্র জপ ও কীর্তন করা শুভ প্রভাব হতে পারে।