জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, সূর্য যখন এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে পরিবর্তন করে, তখন সূর্যের রাশির পরিবর্তনকে ‘সংক্রান্তি’ বলা হয়। তাই সূর্য যখন বৃহস্পতির ধনু রাশি থেকে শনির মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তখন এটিকে জ্যোতিষশাস্ত্রের ভাষায় ‘মকর সংক্রান্তি’ বলা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রে, মকর রাশির অধিপতিকে শনিদেব হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার স্থান নয়টি গ্রহের মধ্যে সপ্তম স্থানে। পুরাণে বলা হয়েছে, শনি গ্রহকে সূর্যদেবের পুত্র ও সূর্যের স্ত্রী ছায়ার সন্তান। একটি কিংবদন্তি রয়েছে যে, শনির অনুরোধে, সূর্যদেব শনি মহারাজকে বলেছিলেন যে তিনি প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। এই সময়ে শনি ও তাঁর উপাসকদের সমৃদ্ধি ও সুখ দেবেন। সেই বিশ্বাসেই, প্রতি বছর শনি ও তাঁর স্ত্রী ছায়ার সঙ্গে দেখা করতে সূর্যদেব মকর রাশিতে শনির গৃহে আসেন। সেখানেই পিতা ও পুত্রের সমাহার ঘটে। এ বছর মকর সংক্রান্তির দিন, শনি তার রাশি মকর রাশিতে সূর্য দেবতাকে আহ্বান , কারণ বর্তমানে শনি শুধুমাত্র মকর রাশিতেই অবস্থান করছে।
তাৎপর্য
ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র ও ধর্মীয় বিশ্বাসে মকর সংক্রান্তিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, এই দিনে স্বর্গের দরজা খুলে যায় এবং দেবতাদের দিন শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বাস করা হয় যে এক বছর পর দেবলোকের একটি দিন। সূর্য উত্তরায়ণ হলে দিন শুরু হয় ও সূর্য দক্ষিণায়ন হলে রাত হয়। তাই মকর সংক্রান্তির দিন, যখন সূর্য উত্তরায়ণ হয়, তখন স্বর্গের দেবতাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পুজো করা হয়। তাদের সন্তুষ্ট করতে আরাধনায় মন দেন ভক্তরা। এই বিশেষ দিনটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন নামে ডাকা হলেও, সবজায়াগায় এক লক্ষ্যেই পালন করা হয়। উত্তর ভারতে, এই উৎসবকে বলা হয় ‘মকর সংক্রান্তি, পঞ্জাবে লোহরি, গাড়োয়ালে খিচড়ি সংক্রান্তি, গুজরাতে উত্তরায়ণ, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, অন্যদিকে কর্ণাটক, কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশে একে সহজভাবে সংক্রান্তি বলা হয়। অসমে, এই উত্সবটি বিহু নামে পালিত হয়।
এদিন কেন দান করা এত গুরুত্বপূর্ণ
ধর্মীয় বিশ্বাস বলে যে মকর সংক্রান্তিতে সূর্যের পূজা করা, সূর্য ও শনি সংক্রান্ত জিনিস দান করলে জাতকের শরীর থেকে নেতিবাচক শক্তি বিনাস হয়ে যায়। দানের অর্থ হল দানযোগ্য বস্তুর মাধ্যমে দেহের নেতিবাচক শক্তি শরীর থেকে বের করে দেওয়া। দান করতে পারেন গুড়, তিল, খিচুড়ি, উরদ, লবণ, তেল, কম্বল, গরম কাপড়, জুতা। এই দিনে ধর্মীয় বইও দান করা হয়।
শুভ মুহুর্ত ও পুণ্যকাল
আগামী ১৪ জানুয়ারি, রাত ৮টা ৫৭ মিনিটে মকর রাশিতে প্সূরবেশ করতে চলেছে সূর্য। উদয় তিথি অনুসারে, মকর সংক্রান্তির উত্সবটি ১৫ জানুয়ারি পালিত হবে। পুণ্যকাল চলবে সকাল ৬:১৭ থেকে সন্ধ্যে ৫:৫৫ পর্যন্ত। কিন্তু মহাপুণ্যকাল হবে সকালে ৭টা ১৭ মিনিট থেকে ১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত।
(Disclaimer: এখানে উপলব্ধ তথ্য শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে টিভিনাইন বাংলা কোনও বিশ্বাস বা তথ্য নিশ্চিত করে না। কোনও তথ্য বা বিশ্বাস অনুশীলন করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)