হিন্দুধর্মে (Hinduism) তুলসী গাছকে (Tulsi Tree) অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেবতার মতই তুলসীগাছকে পুজো করা হয়। প্রসঙ্গত, হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী দেবী লক্ষ্মী (Goddess Lakshmi)অর্থাত্ সম্পদের দেবীকে সম্মান প্রদানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে এই পবিত্র গাছকে। জীবনে কোনও আর্থিক সংকট (Financial Problems) দেখা দিলে জ্যোতিষবিদরা দেবী লক্ষ্মীর রূপে তুলসী গাছের পুজো ও তুলসী সংক্রামন্ত নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হ। তবে তার আদে জানতে হবে বাস্তু ও জ্যোতিষশাস্ত্রে উল্লিখিত তুলসী সম্পর্কে প্রধান নিয়মগুলি কী কী।
হিন্দুদের ঘরে তুলসীর মঞ্চ অবশ্যই থাকে। আর যদি না থাকে, তাহলে অবশ্যই বাড়িতে তুলসী গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা প্রোজন। তবে কখন তুলসী গাছ লাগাবেন? তুলসী গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মা,। তুলসীকে দেবী লক্ষ্মীর রূপ হিসেবে মনে করা হয়, তাই ঘরে নতুন করে তুলসী গাছ এনে কার্তিক মাসে পুঁতুন। এমন নিয়ম মেনে চললে গৃহে লক্ষ্মীর প্রবেশ ঘটে।
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী তুলসী গাছের যত্ন নেবেন কীভাবে?
– ভুল করেও বাড়ির দক্ষিণ দিকে তুলসী গাছ লাগানো উচিত নয়। এই দিকে পূর্বপুরুষদের বাস বলে মনে করা হয়। এখানে তুলসী গাথ রাখলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন।
– বাড়ির প্রবেশদ্বারে বা অন্য কোনও জায়গায় যেখানে আবর্জনা রাখা হয় বা জুতো রাখা হয়, সেখানে ভুলেও তুলসী গাছ লাগাবেন না।
– তুলসীকে সিঁদুর নিবেদন করা নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে। রয়েছে বিভ্রান্তিও। তবে বাস্তুতন্ত্র অনুযায়ী তুলসী গাছকে সিঁদুর দান করা যায়।
– তুলসী গাছ সবসময় মাটি পাত্রে রাখুন। কখনও প্লাস্টিকের পাত্রে রাখবেন না। সম্ভব হলে তুলসী পাত্রের লেবু ও হলুদ দিয়ে শ্রী কৃষ্ণ লিখে রাখুন।
– তুলসী গাছ বুধ গ্রহের প্রতিনিধিত্ব পালন করে, তাই এই গ্রহে শ্রীকৃষ্ণের রূপ হিসেবে মনে করা হয়।
বাস্তু অনুযায়ী তুলসী পুজোর কিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলি ভুলেও কখনও এড়িয়ে যাবেন না…
– নিয়মিত তুলসী পূজা করতে পারেন তবে সন্ধ্যায় কখনও তুলসী স্পর্শ করা উচিত নয়। এছাড়া একাদশী, রবিবার, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের দিনেও তুলসী স্পর্শ করা উচিত নয়। রবিবারেও তুলসীকে জল দেওয়া উচিত নয়।
– তুলসীতে জল নিবেদনের পাশাপাশি কাঁচা দুধও দেওয়া যেতে পারে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে কাঁচা দুধ নিবেদনের মাধ্যমে দুর্ভাগ্য দূর করে।
– রান্নাঘর বা বাথরুমের কাছে কখনই তুলসি গাছ রাখা উচিত নয়। পুজো ঘরের জানালার কাছে তুলসী গাছ রাখতে পারেন।
– আপনি যদি প্রতিদিন তুলসীকে প্রদক্ষিণ করতে চান তবে জল দেওয়ার সময় তুলসী গাছটিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করুন। প্রথমে সূর্যকে জল এবং তারপর তুলসীকে জল দিতে হবে।
– তুলসীকে জল দেওয়ার সময় ‘মহাপ্রসাদ জননী, সর্ব সৌভাগ্যবর্ধিনী আধিক ব্যাধি হর নিত্যম, তুলসী ত্বাম নমোস্তুতে।’ এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করুন।
– ১৫ দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে তুলসী পাতা রাখতে পারেন এবং পাতা শুকিয়ে গেলে প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন।
– সাধারণত তুলসীকে লাল চুনরি দিয়ে সাজিয়ে তোলেন, তবে এটি মঙ্গলের রঙ এবং তুলসী বুধের তাত্পর্যকারী। বুধ এবং মঙ্গল বন্ধু নয়। বুধের অনুকূল গ্রহ শুক্র ও শনি। তাই তুলসী গাছকে সাদা, উজ্জ্বল, নীল চুনরি নিবেদন করা উচিত।
– বাড়িতে সর্বদা ১.৩, ৫ বা ৭ টি তুলসী গাছ থাকা উচিত। ২,৪ বা ৬সংখ্যায় কখনওই তুলসী গাছ রাখা উচিত নয়।
– তুলসী গাছকে কখনই অপরিষ্কার বা নোংরা হাতে স্পর্শ করা উচিত নয়। এমনটা করলে দেবী লক্ষ্মী খুব ক্রুদ্ধ হতে পারেন।