বিষ্ণু পুরাণ (Vishnu Puran) হল অষ্টাদশ হিন্দু মহাপুরাণের অন্যতম তথা একটি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। বিষ্ণুপুরাণে কলিযুগে (Kaliyug) ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণিত করা হয়েছে। এই পুরাণে কলিযুগে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও পরিস্থিতির কথাও বলা হয়েছে। যেখানে ভগবান বিষ্ণুর (Lord Vishnu) অবতার ও চরিত্র ছাড়াও বিভিন্ন যুগের রাজবংশ ও মানুষের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। বিষ্ণুপুরাণের ষষ্ঠ খণ্ডের প্রথম অধ্যায়ে কালীধর্মণিরূপ বলা হয়েছে। পরাশর ও তার শিষ্য মৈত্রেয়ের মধ্যে কথোপকথনরূপে বিধৃত এই পুরাণ ছয়টি অংশে বিভক্ত। বিষ্ণু পুরাণে কলিযুগে উপার্জন সম্পর্কে কি বলেছেন মহর্ষি পরাশর?লাখ টাকা উপার্জনকারীও কলিযুগে ঋণী থাকবে কেন, তা মহর্ষি কেন বলেছেন , সে কথাই এখানে জানাব…
কলিযুগে ধর্ম ও কর্মই হবে মানুষের সম্পদ
মহর্ষি পরাশর ঋষি মৈত্রেয়কে বলেছিলেন যে কলিযুগ হবে খুবই অদ্ভুত যুগ। এই যুগে সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ ও দ্বাপরে যে ধর্মব্যবস্থা থাকবে তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মানুষের ধর্ম ও কাজ একটিই থাকবে, যে কোনও উপায়ে অর্থ উপার্জন করা। এই কলিযুগ যুগে কেবল অর্থই হবে ক্ষমতা ও প্রভাবের কথক। সেজন্য মানুষ ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্ম বিবেচনা না করে নিজেদের প্রভাব-শক্তি প্রদর্শনের জন্য যে কোনও উপায়ে অর্থ উপার্জনে অস্থির থাকবে। কিন্তু প্রচুর অর্থ উপার্জনের পরেও মানুষ সন্তুষ্ট হবে না। ঋণী থেকে যাবে।
কোটিপতিরাও কলিযুগে ঋণী থাকবেন
কলিযুগের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে মহর্ষি পরাশর ঋষি মৈত্রেয়কে বলেছিলেন যে কলিযুগে মানুষ যতই উপার্জন করুন না কেন, সে নিজেকে ধন্য মনে করবেন না। এর কারণ হল, মানুষ সারাজীবন নিজের জন্য বাড়ি তৈরি করার জন্য তার সামর্থ্য ও সম্পদ অনুযায়ী লাখে বা কোটি টাকা আয় করবে, সেই টাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যয় করবে। সম্ভবত এই প্রসঙ্গে মহর্ষি পরাশর কলিযুগে গৃহ নির্মাণের জন্য গৃহঋণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। মানুষ একটি বাড়ির জন্য ঋণ নেয় এবং তারপর সারাজীবন এই ঋণশোধ করতে থাকে। যদি ঋণ পরিশোধ করা হয়, তাহলে নতুন সম্পত্তির জন্য ঋণ নিন। এইভাবে, কলিযুগে একজন মানুষ যতই উপার্জন করুন না কেন, তিনি সর্বদা ঋণী থাকবেন এবং বিষ্ণু পুরাণেই বলা হয়েছে যে দেবী লক্ষ্মী ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকেন, যাতে একজন মানুষ যতই উপার্জন করুক না কেন , সে ধন্য মনে করবেন না।
টাকা কলিযুগে মানুষকে অহংকারী করে তুলবে
কলিযুগ সম্পর্কে মহর্ষি পরাশরও বিষ্ণুপুরাণে বলেছেন যে, কলিযুগে মানুষ যদি সামান্য পদ ও ধন-সম্পদ পায়, তাহলে সে নিজেই অহংকার দেখাতে শুরু করবে। অল্প টাকা দিয়েই মানুষ অহংকারী হয়ে উঠবে। অন্যকে দমন করার চেষ্টা করবে। নিজেকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করার প্রতিযোগিতা মাতবে কলিযুগের মানুষজন। সত্যযুগে, ত্রেতাযুগ ও দ্বাপর যুগে একজন মানুষ তার যা কিছু অর্থ আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে। ক্ষুধার্ত থাকার পরেও অতিথিদের আপ্যায়ন করবে। কিন্তু কলিযুগে অতিথি ও দান-ধ্যানের জন্য অর্থ ব্যয় না করে মানুষ নিজের সুখ-দুঃখের জন্য ব্যয় করবে। .
কলিযুগে টাকার গুরুত্ব
কলিযুগ এমন একটা যুগ হবে যেখানে টাকাই হবে মুখ্য। বিয়ের জন্য পুরুষের গুণ, কর্ম ও জ্ঞান নয়, তার অর্থনৈতিক অবস্থা দেখা হবে। মানুষ শুধু তাদেরই বিয়ে করতে চায় যাদের টাকা আছে। অর্থের লোভে মানুষ জীবনসঙ্গীকে বলি দেবে, ও যাদের টাকা আছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে। কলিযুগে অর্থের এমন গুরুত্ব হবে যে, যারা অর্থের জন্য নিন্দিত কাজ করে এবং পাপ কাজ করে তাদের মানুষ সম্মান দেবে। মানুষ দান-ধ্যান করবে, ধর্মও করবে হিসাব করে। অল্প দান দেন এমন মানুষকে ধার্মিক বলা হবে।
(Disclaimer: এখানে উপলব্ধ তথ্য শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে টিভিনাইন বাংলা কোনও বিশ্বাস বা তথ্য নিশ্চিত করে না। কোনও তথ্য বা বিশ্বাস অনুশীলন করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)