বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের রথযাত্রা থেকে উল্টোরথের মধ্যে প্রথম মঙ্গলবার ও শনিবারে বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হয় বিপত্তারিণী ব্রত ও পুজোপাঠ। শাস্ত্র মতে, দুর্গার ১০৮টি অবতারের মধ্যে অন্যতম হলেন দেবী সঙ্কটনাশিনী। তাঁরই একটি রূপ হলেন মা বিপত্তারিণী। বাংলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পুজো চলে প্রায় চারদিন ধরে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, যে কোনও বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য এই শক্তিশালী দেবীর পুজো করা হয়। সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন যিনি বা বিপদনাশিনী, তিনিই হলেন বিপত্তারিণী।
সাধারণত, যে কোনও সঙ্কট থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই পুজো ভক্তিভরে পালন করা হয়ে থাকেন বাঙালিরা। বিশ্বাস করা হয়, সবরকম বিপদ থেকে মুক্তি পেতে ভক্তিভরে পুজোপাঠ করলে, ব্রতপাঠ মেনে চললে সব সঙ্কট থেকে রক্ষা করেন দেবী বিপত্তারিণী। প্রথা অনুসারে হাতে “লাল তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাঁধা হয়। এবছর কবে ও কখন পড়েছে বিপত্তারিণী পুজো ও ব্রত, তা জেনে রাখা দরকার।
পঞ্চাঙ্গ মতে বিপত্তারিণী পুজোর শুভ ও সঠিক সময় কখন পড়েছে?
১৪৩১ বঙ্গাব্দ তথা এ বছর বিপত্তারিণী পুজো পালিত হয় রথ ও উল্টোরথের মঙ্গলবার ও শনিবার। রথের পর প্রথম মঙ্গলবার পড়েছে ৮ জুলাই। প্রথম শনিবার ও উল্টোরথের শনিবার পড়েছে ১৩ জুলাই। এই দুদিনই পালিত হবে শ্রী শ্রী বিপত্তারিণী পুজোর ব্রত পালন করা হবে। পঞ্চাঙ্গ মতে, সকাল ৫টা ৩২ মিনিটে স্নানাদি। বিপত্তারিণী দেবীর দ্বিতীয় পুজো পালিত হবে শনিবার। এদিন একই সঙ্গে পালিত হবে সূর্যপুজো ও দেবী বিপত্তারিণীর পুজো।
বিপত্তারিণী পুজোর ব্রতপাঠ করা কোনও সহজ কাজ নয়। কারণ গ্রামবাংলায় কেন, শহরের মধ্যেও এই শক্তিশালী দেবীর পুজোপাঠ করা হয় অত্যন্ত নিয়ম মেনে। নিয়ম অনুযায়ী, বিপত্তারিণী দেবীর আরাধনা করা হয় গঙ্গা ও সূর্যপুজোর মাধ্যমে। চারদিনের পুজোর প্রথমদিনে চলে দেবীর উপাসনা। সেদিন বাঙালি মহিলারা ব্রত রেখে গঙ্গায় স্নান করে দণ্ডী কাটেন। তারপর উপবাস রেখে দুদিন ধরে চলে কীর্তন, ব্রতকথা শোনা, ভজন। চতুর্থদিনে পালিত হয় বিসর্জন। সেদিন উপবাস রেখে দেবীর পুজো করে বিদায় জানানো হয়। পুজোর প্রথা অনুযায়ী বিশেষ নিয়ম হল, সব কিছুই ১৩টা করে নিবেদন করা। ব্রতের আচার নিয়ম অনুসারে সবকিছুই উত্সর্গ করা হয় ১৩টি করে। তেরো রকম নৈবেদ্য সাজানো। ১৩টি ফুল নিবেদন করা, ১৩টি লুচি, ১৩টি ফল, ১৩টি দুব্বা ইত্যাদি।বিপত্তারিণী পুজোর ব্রত ও উপবাস রাখলে এদিন কোনওভাবেই চাল, মুড়ি বা চিঁড়ে খাওয়া উচিত নয়।