বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও বিপত্তারিণী মন্দির খুব একটা চোখে পড়ে না। খুব কম জায়গায় এই দেবীর মন্দির দেখা যায়। কলকাতার বুকেও রয়েছে। গড়িয়ার প্রাচীন একটি বিপত্তারিণী মন্দির রয়েছে, যেটি অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করা হয়। আজ বিপত্তারিণী পুজো ও ব্রত উপলক্ষ্যে এই মন্দিরের মহিলাদের ভিড় পড়ে চোখে পড়ার মত। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া থেকে দশমী পর্যন্ত ধুমধাম করে বিপত্তারিণী পুজো করা হয় গোটা দক্ষিণবঙ্গে। গ্রামাঞ্চলের পুজো করা হলেও শহরাঞ্চলেও এর দুরন্ত প্রভাব রয়েছে।
সাধারণত এই ব্রতবাঠ ও পুজো করার লক্ষ্যই হল মঙ্গলকামনা করা। অধিকাংশ হিন্দু ঘরের মহিলারাই ব্রত পালন করে থাকেন। প্রতিটি হিন্দু ঘরে এই ব্রত ও উপবাসের তাত্পর্য রয়েছে ব্যাপক। বাঙালি পুজো ও ব্রত অনুষ্ঠানের মধ্যে বিপত্তারিণী পুজো একটু আলাদা ও স্বতন্ত্র। পুজোর আয়োজন থেকে শুরু করে পুজোবিধিতে রয়েছে বিশেষ নিয়ম। জাগ্রত এই দেবীর পুজো করা হয় অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে। মন্দিরে না গিয়ে বাড়িতেও পজো করতে পারেন নিজে। পুরোহিত ছাড়াই নিজে নিজেই বিপত্তারিণী পুজো ও ব্রত পালন করতে পারবেন।
বিপত্তারিনী পুজো ও ব্রতপাঠ করলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তারমধ্যে অন্যতম হল, এদিন পুজোর আগের দিনথেকে নিরামিষ ভোজন করার বিধি রয়েছে। এছাড়া পুজোপাঠ শেষ হলে ১৩টি করে লুচি,ফল আহার করতে হয়। সেই ভোগ পরে প্রসাদ হিসেবে বিলি করতে হয়। এছাড়া বাঙালি নিয়ম মেনে বাঙালি মহিলারা শাঁখা সিঁদুর, আলতা পরার নিয়ম রয়েছে। এই ছোট ছোট কাজুলি মেনে চলতে হয়।
বিপত্তারিণী পুজো যদি বাড়িতে পুরোহিত ছাড়া করতে চান, তাহলে কী কী উপকরণ লাগবে?
পুরোহিত ছাড়াই বিপত্তারিণী ব্রত ও পুজো করলে লাগবে ঘট,আম্রপল্লব, শীষ-সহ কচি ডাব, ১৩ রকমের ফল, ১৩ রকমের ফুল, ১৩ গাছি গিঁট দেওয়া লাল সুতো ও ১৩টি করে দুর্বা, ১৩টি পান, ১৩টি সুপারি। আর লাগবে লাল জবা ও পদ্ম ফুল। দেবী বিপত্তারিণীর অত্যন্ত প্রিয় এই দুটি ফুল। তাই পুজোর আয়োজন এই দুটি ফুল না দিলে পুজো অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়।
পুজোবিধি
বিপত্তারিণী পুজো সাধারণত চারদিন ধরে পালিত হয়। বাংলার অত্যন্ত জাগ্রত দেবীর পুজো উপলক্ষ্যে মহিলারাই সাধারণত উপবাস পালন করে থাকেন। পুজোর নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমদিনে দেবীর আরাধনা করা হয়। গঙ্গায় স্নান করে মহিলারা দণ্ডী কাটেন। এদিন পুজোর আগে পুরোহিতরা আম্রপল্লব-সহ ঘট স্থাপন করা হয়।বাঙালি মহিলারা নাম-গোত্র সহযোগে পুজো করেন। সংসার ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় ও সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রার্থনা করেন। উপবাস ভঙ্গ করার সময় ফলের জুস বা সরবত খাওয়ার রীতি রয়েছে। এদিন ভুলেও ভাত , মুড়ি, চিড়ে, আটার রুটি খাওয়া উচিত নয়। পুজোর র বিপত্তারিণী ব্রতকথা পাঠ করার নিয়ম রয়েছে। এরপর দুই রাত ধরে চলে লোকগান, কীর্তন, ভজন। চতুর্থদিনে পুজাপাঠ করে নিরঞ্জনকরা হয়।
প্রথা অনুযায়ী এই পুজোর পর হাতে লাল তাগা পরিধান করার নিয়ম রয়েছে। লাল সুতোয় বাধা দু্র্বাঘাসের তাগা পরেন মহিলা ও পুরুষরা। সাধারণত নিয়ম মেনে পুরুষরা ডান হাতে, মহিলারা বাম হাতে এ পবিত্র ধাগা পরেন। কমপক্ষে এই ব্রত টানা ৩ বছর পালন করার নিয়ম রয়েছে।
বিপত্তারিণী পুজোর মন্ত্র
মাসি পূণ্যতমেবিপ্রমাধবে মাধবপ্রিয়ে।
ন বম্যাং শুক্লপক্ষে চবাসরে মঙ্গল শুভে।
সর্পঋক্ষে চ মধ্যাহ্নেজানকী জনকালয়ে।
আবির্ভূতা স্বয়ং দেবীযোগেষু শোভনেষুচ।
নমঃ সর্ব মঙ্গল্যেশিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে ।
ত্রম্বক্যে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে।।