আজকাল সুস্থভাবে খাওয়ার সময় নেই কারওরই। সকাল থেকে নাকে মুখে গুঁজে কিছু খেয়েই অফিস, সেখানে অর্ডার দিয়ে লাঞ্চ করা, তাড়াহুড়ো করে লাঞ্চ সেরেই ফের রাতের ডিনারের জন্য বাড়ি ফিরে অল্প রান্না করা। কিন্তু এমন তাড়াতাড়ি খাওয়ার রেওয়াজ নেই বাড়ির বড়দের। তারা বেশ পরিপাটি করে, খাবার সাজিয়ে, ভালো করে বসে সুন্দর করে খেতে পছন্দ করেন। তাই ঠাকুরদা বা পুরনো আমলের মানুষরা খাবার খাওয়ার আগে বেশ পরিপাটি করে বসেন। এমনটা এখন সচরাচর দেখা না গেলেও এই রীতি এখনও মেনে চলেন পণ্ডিত ও বাড়ির বয়স্করা। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে যখন খাবার খাওয়ার আগে থালা বা প্লেটের চারপাশে আলগোছে জল নিয়ে ছিটিয়ে দেন। তারপর ভাত ভেঙে কিছুটা অংশ থালার একপাশে রেখে দিয়ে তারপর খাওয়া শুরু করেন। এমনটা কেন করা হয়, এ নিয়ে কৌতূহল রয়েছে আজকের প্রজন্মের।
আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে খাবার খাওয়ার নিয়ম ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে খাবার খাওয়ার সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। বিশ্বাস করা হয় যে খাবার খাওয়ার আগে আমাদের প্লেটের চারপাশে জল ছিটিয়ে দেওয়া উচিত। তবে খাবারের প্লেটের চারপাশে জল ছিটানোর কারণ কী? এই কাজ করার পিছনে রয়েছে ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক, উভয় কারণ।
শাস্ত্র মতে, খাওয়ার আগে ভাতের থালার চারপাশে জল ছিটিয়ে দেওয়া মানে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। বর্তমান সময়েও মানুষ তাই করে। বেশি পরিমাণে নয়, কিন্তু আজও মানুষ এই রীতিকে বিশ্বাস করে। মনে করা হয় যে, আমরা যখন এই কাজ করে থাকি, তখন প্লেটের কাছে জল ছিটিয়ে একটি বৃত্ত তৈরি করা হয়। তাতে নেগেটিভিটি খাবারের থালার কাছে আসতে পারে না।
খাবার খাওয়ার আগে জল ছিটিয়ে দেওয়া মানে দেবী অন্নপূর্ণার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। তিনিই জগতের সমস্ত মানুষের মুখে অন্ন জোগান দেন বলে মনে করা হয়। তিনিই অন্নদাতা। তাই যিনি প্রতিদিন খাবার দান করছেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞ জানিয়ে কড়জোড়ে ধন্যবাদ জানানো হয়।
এ তো গেলে ধর্মীয় কারণ। খাবারের থালার চারপাশে জল ছিটিয়ে দেওয়ার রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণও। বিজ্ঞান বলছে, খাবারের থালার চারপাশে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড়, ক্ষুদ্র প্রাণী, যেগুলি চোখের আড়ালে থেকে যায়, সেগুলি জল দিয়েই ধ্বংস করা সম্ভব। তাতে খাবার থাকে শুদ্ধ। হিন্দু ধর্মে এমন রীতিকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়।