News9 Plus world exclusive: ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণ: কী ভাবে ভারতে বিস্ফোরক পাঠাল ISI? অন্তর্তদন্তে নিউজ-৯ প্লাস

১৯৯৩ সালে কী ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র এল, সে ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিত এবং বিস্ফোরণের জন্য RDX সরবরাহে কে মাস্টারমাইন্ড ছিল তাকে শনাক্ত করা উচিত।

News9 Plus world exclusive: ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণ: কী ভাবে ভারতে বিস্ফোরক পাঠাল ISI? অন্তর্তদন্তে নিউজ-৯ প্লাস
১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণ। ফাইল ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 11, 2023 | 8:58 PM

নয়া দিল্লি: মুম্বইয়ের ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ৩০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও তদন্ত অসম্পূর্ণ। অনেক বিষয়েই এখনও তদন্ত করা হয়নি। যেমন, যে ভেসেলে করে বিস্ফোরক মুম্বইয়ে প্রবেশ করেছিল, সেই ভেসেল সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত এখনও হয়নি। আবার ওই ভেসেল থেকে যে সমস্ত কার্ডবোর্ডের বাক্সে করে বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র শহরের ভিতর প্রবেশ করেছিল, কিন্তু সেগুলি কীভাবে নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে ভেসেলে করে এল, সে ব্যাপারে তদন্ত হয়নি। নিউজ-৯-এর অন্তর্তদন্তে এমনই অনেক কিছু প্রকাশ্যে এসেছে।

১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণ নিয়ে নিউজ-৯-এ কলম ধরেছেন নির্ভীতি মোহন। তিনি জানান, পুরোনো ঘটনার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৯৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে একটি অজ্ঞাত বাণিজ্যিক ভেসেল মুম্বইয়ের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে রায়গড় উপকূলে আসে। ডন দাউদ ইব্রাহিমের সহকারীর টাইগার মেনন এই ভেসেলের অপেক্ষা করছিলেন এবং ওই ভেসেলের ওয়াকিটকির মাধ্যমে টাইগার মেননের যোগাযোগ হয়েছিল। তারপর ওই ভেসেলে আসা একাধিক কাঠ এবং কার্ডবোর্ডের বাক্স একটি মোটরবাইকে করে শহরে নিয়ে আসা হয়। বহুবার ওই মোটরবাইকটি যাতায়াত করেছে। এর একমাস পর বোম্বেতে (তৎকালীন নাম) পরপর ১২টি বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে ২৫৭ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ১৪০০ জন গুরুতর জখম হন। ওই বাক্সগুলিতে RDX বিস্ফোরক সহ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল এবং সেগুলি পাক গোয়েন্দা সংস্থা ISI মুম্বইয়ে পাঠিয়েছিল।

নিউজ-৯ প্লাস-এর তদন্তে প্রকাশিত, ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড হল ISI-এর ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জাভেদ নাসির। সামরিক সুক্ষ্মতার সঙ্গে এবং ‘ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের দ্বারা বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল। ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত এটিই ছিল শহরাঞ্চলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা। এই বিস্ফোরণে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, দু-টনের বেশি RDX, ৬২ টাইপ ৫৬টি রাইফেল, ৬৯১টি হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়েছিল। ফলে বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং মার্বেলের মেঝেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামরিক আগ্নেয়াস্ত্র না থাকলে নাসিরের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হত না।

RDX সড়কপথে শহরের ভিতরে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু, কীভাবে রায়গড় উপকূল থেকে সড়কপথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল, তা এই বিস্ফোরণের ৩০ বছর পরেও রহস্য হয়ে রয়েছে। এব্যাপারে মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এম.এন সিংয়ের দাবি, পুলিশ এই বিস্ফোরণের তদন্ত পুলিশ করেনি। তাঁর কথায়, “এই তদন্তে ছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু, তদন্তে এই সমস্ত প্রশ্ন গোয়েন্দা সংস্থা করেনি।” যদিও নিউজ-৯ প্লাস তৎকালীন নৌবাহিনীর মুখ্য অ্যাডমিরাল এল রামদাসকে প্রশ্ন করলেও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ভাইস অ্যাডমিরাল বি.এস রান্ধাওয়া অবশ্য বলেন, “এটা তদন্ত হওয়া উচিত এবং বিস্ফোরণের জন্য RDX সরবরাহে কে মাস্টারমাইন্ড ছিল তাকে শনাক্ত করা উচিত। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে তার বিচার করলে আইএসআই, এলটিটিই বা অন্য যে সমস্ত জঙ্গি সংগঠন ভারতে হামলার কথা ভাবছে, তাদের কাছে কড়া বার্তা পাঠাবে এবং ওই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।”

যদিও এই গোপন সামরিক আক্রমণের দায় পাকিস্তান কখনওই নেবে না। এই হামলায় পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ বা বণিক জাহাজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা হবে। এস হোসেন জাইদির বই ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’-তে বলা হয়েছে, ‘একটি বড় লাল স্পিডবোট’ বিস্ফোরক নিয়ে এসেছিল। যদিও এটি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কারণ করাচি এবং রায়গড়ের মধ্যে ৫০০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করার জন্য একটি ‘স্পিডবোট’-এর পরিসর থাকবে না। বিস্ফোরক সমুদ্র থেকে স্থলভূমিতে নিয়ে আসার জন্য LTTE বা দক্ষিণ এশিয়ার চোরাচালানকারীদের নেটওয়ার্ক ISI ব্যবহার করে থাকতে পারে। আবার ভি.আর মেরিটাইম সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ক্যাপ্টেন সঞ্জয় পরাশরের কথায়, “আমার সন্দেহ আইএসআই একটি ছোটো ভেসেল ব্যবহার করেছিল, যেটির কোনও হদিশ মেলেনি।” তিনি আরও বলেন, “আইএসআই মোটা টাকার বিনিময়ে LTTE জাহাজ ব্যবহার করে থাকতে পারে।” তবে ১৯৯৩ সালে কী ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র এল, সে ব্যাপারে তদন্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন পরাশর। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয়, এটা একটা বড় ত্রুটি রয়েছে। এটা কখনও আলোচনা হয়নি এবং আমিই প্রথম এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলি। আমি অবাক হয়ে যাই, কেন এই বিষয়ে কিছু ভাবা হয়নি।”