রসেটের ভালবাসার গল্প হার মানাবে চিত্রনাট্যকেও

রসেট পেশায় শিক্ষিকা। দীর্ঘ দিন ধরে সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে পড়াচ্ছেন তিনি। রসেট অবশ্য দুই সন্তানের মাও বটে! বাড়ি ও স্কুল মিলে সন্তানদের নিয়েই দিন কাটে তাঁর।

রসেটের ভালবাসার গল্প হার মানাবে চিত্রনাট্যকেও
Roset LakraImage Credit source: We Make Us

| Edited By: Soumya Saha

May 13, 2023 | 7:52 PM

ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা। নিজের মতো করে পথ চলা — বেড়ে ওঠার সময় প্রতিটি শিশুর এমন এক জন অভিভাবকের প্রয়োজন হয়, যে তাদের বোঝে এবং নিঃশর্তে ভালবাসে। এটা সত্যিই যে প্রত্যেকের মা-ই হলেন প্রথম ঈশ্বর, দার্শনিক, পথপ্রদর্শক এবং বন্ধু। তিনিই আমাদের হাত ধরে হাঁটতে শেখান। শিশু অবস্থায় মা-ই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি প্রথম বিশ্বাসের করতে শেখান। তাঁর দেখানো পথেই পথ চলি আমরা। একজন মা হিসাবে, এটি তাঁর সন্তান দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার। মা-ই তাঁর সন্তানকে শেখান জীবনের পাঠ। তবে শুধু দুই সন্তানকেই নয়, শিক্ষিকা হিসাবে মায়ের মতো করেই বহু ছাত্র-ছাত্রীকে জীবনের পাঠ পড়াচ্ছেন রসেট লাখরা

রসেট পেশায় শিক্ষিকা। দীর্ঘ দিন ধরে সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে পড়াচ্ছেন তিনি। রসেট অবশ্য দুই সন্তানের মাও বটে! বাড়ি ও স্কুল মিলে সন্তানদের নিয়েই দিন কাটে তাঁর। এই বিষয় রসেটের বক্তব্য, “বাচ্চাদের সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়া আমার জন্য সত্যিই একটি বড় দায়িত্ব। এক জন শিক্ষক হিসাবে আমার কাছে সমস্ত বাচ্চারা সমান। তাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে তৈরি করা আমার দায়িত্ব।”

St. Francis Academy Teacher Roset Lakra

শিক্ষক হিসাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বেশ প্রিয় রসেট। মায়ের মতো করেই তাদের আগলে রাখেন তিনি। এক জন শিশু যেমন মাকে বিশ্বাস করে বাড়িতে থাকে, তেমনই স্কুলেও এমন কাউকে খোঁজে যার কাছে মাকে খুঁজে পাবে। সেই দায়িত্বই দীর্ঘ দিন ধরে পালন করেন রসেট। এই বিষয়ে রসেট লাখরা বলেন, “এক জন শিক্ষক হিসাবে আমি সত্যিই খুশি যে আমি মা রূপে আমার ভূমিকা পালন করতে পেরেছি। যখন আমি আমার ক্লাসের প্রতিটি শিশুকে ভালোবাসতে, যত্ন নিতে এবং গাইড করতে পারি, তখন সত্যিই আমি গর্ববোধ করি।

সম্প্রতি ক্লাসে ঘটে যাওয়া মর্মস্পর্শী একটি ঘটনাও শেয়ার করেন রসেট। তাঁর এক ছাত্রী রয়েছে তার নাম সানভি নায়েক। তার বয়স ৬ বছর। সানভি বিশেষভাবে সক্ষম। ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে তাঁর বেশি মনোযোগ এবং যত্নের প্রয়োজন হয়। রসেট বলেন, “সানভি যখন কেজিতে যোগ দিয়েছিল, তখন শুরুতে সে চিৎকার করত, হাসত, টেবিলে শব্দ করত এবং বিরক্ত করত। ওকে বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছে। ও যে ভাবে চিন্তা করে, চারপাশের জিনিসগুলোকে দেখে, উপলদ্ধি করে, সে ভাবেই আমি ভেবেছি। ও আমাকে এখন বিশ্বাস করে। ভরসা করে। এটাই আমার প্রাপ্তি।”

এক জন মা সব সময় তার সন্তানকে নিঃশর্তে ভালবাসেন। কোনও বিচার না করেই। সানভির সঙ্গে থেকে সেই পথেই হেঁটেছেন রসেট। সব শিশুই যে সম্মান, ভালবাসা এবং যত্ন পাওয়ার যোগ্য, সে কথা বরাবরই মেনে চলেছেন রসেট

St. Francis Academy Student, Saanvi Nayek

বিশেষ শিশুদের সর্বদাই বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। সানভির ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই ছিল। সানভি অন্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা শব্দ করে। সে ব্যতিক্রমী আচরণের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। আসলে প্রত্যেকের মধ্যেই যে ভাব প্রকাশের দক্ষতা থাকে, তা সানভির ক্ষেত্রে খানিক আলাদা ছিল। সেই আলাদা বিষয়গুলি বুঝেই সানভির সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিলেন রসেট। আর সে ভাবেই নিজের মতো একটু একটু গড়ে তুলছেন সানভিকে। হঠাৎ করেই স্মৃতিচারণ করে বললেন, “ফোনিকস শব্দের সঙ্গে একটি শব্দ উচ্চারণ করতে বলেছিলাম তখন সে সঠিকভাবে উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছিল। এটা আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের মূহর্ত ছিল যে তার শেখার এবং প্রকাশ করার দক্ষতা তা আছে দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম।”

এমনই আরও বহু ঘটনা রয়েছে যা ছুঁয়ে গিয়েছে রসেটের মন। আরও একটা ঘটনা ভাগ করে নিলেন রসেট। বললেন, “এক বার সানভির খুব খিদে পেয়েছিল। ও হঠাৎ করে দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে ‘মা, মা, টিফিন’। ওর ওই ‘মা’ ডাকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম ও আমায় কতটা বিশ্বাস করে।”  নিঃসন্দেহে এটি রসেটের জন্য একটি হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা ছিল।

সানভি শুধু একাই নয়। তার মতো বহু শিশু রয়েছে। তাদের যে পরিমাণ যত্ন, ভালবাসা এবং মনোযোগ প্রয়োজন হয়, তা এক জন মা দিতে পারেন। এক জন শিক্ষক হিসেবে এই ভালবাসা পাওয়া যেন সত্যিই আশীর্বাদ। এই মাতৃ দিবসে সেই সমস্ত মায়েদের কুর্ণিশ যাঁরা রসেটের মতো বুক দিয়ে আগলে রেখেছে পৃথিবীর সমস্ত বাচ্চাদের।